বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, এই সরকার জনগণের নয়, তারা ভারত, চীন, রাশিয়ার সরকার। তাই আমরা এই সরকারকে মানতে বাধ্য নই।
তিনি বলেন, ৭ই জানুয়ারি মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায় নাই। ৭ শতাংশের বেশি মানুষ ভোট দেয়নি। শেখ হাসিনা দেশের ৭ ভাগ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছেন। তারেক রহমান ৯৩ শতাংশ মানুষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন
আজ বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কালো পতাকা মিছিল শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বাতিল, খালেদা জিয়া সহ গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীর মুক্তির এক দফা দাবিতে এই কালো পতাকা মিছিলের আয়োজন করে বিএনপি। গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর এটাই বিএনপির বড় কর্মসূচি।
এ সময় আগামী ৩০শে জানুয়ারি দেশের সকল মহানগর, থানায়, জেলায় কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেন গয়েশ্বর রায়। তিনি বলেন, অবৈধ ডামি সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদের নির্বাচনের দাবিতে ৩০ জানুয়ারি দেশের সকল মহানগর, থানা, জেলা, সদর, সকল উপজেলায় এবং সকল পৌরসভায় বিএনপির উদ্যোগে কালো পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
বক্তব্য শেষে কালো পতাকা মিছিলের উদ্বোধন করেন গয়েশ্বর রায়। মিছিলটি নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় হয়ে ফকিরাপুল, আরামবাগ মোড় ঘুরে নয়াপল্টনে এসে শেষ হয়।
সরকারের সমালোচনা করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের জনগণের সরকার নয়। তারা চীন, ভারত ও রাশিয়ার সরকার। সুতরাং এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করতেই হবে।
বিজ্ঞাপন
এই সরকারকে আমরা মানতে বাধ্য নই। এটা আমাদের ভোটের লড়াই, গণতন্ত্রের লড়াই এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াই। সুতরাং প্রতিরোধের আগেই মানে মানে কেটে পড়ুন।
গয়েশ্বর বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটাতে চাই। আজকে জিনিসপত্রের দাম অতিমাত্রায় বৃদ্ধি। দেশের মানুষ দিশেহারা। ঘরে ঘরে অভাব। দিনমজুর মানুষ আগের মতো পেট ভরে দুবেলা খেতে পারেনা।
তিনি বলেন, দেশটাকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। আর তারা নাকি সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য নির্বাচন করেছে। আসলে এই ধারাবাহিকতা তাদের লুটপাট ও মহাদুর্নীতির কারণে। দশ লক্ষ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। যারা পাচার করেছেন তারা কিন্তু অস্বীকারও করে না। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আজকে ৬শ‘র বেশি সংসদ সদস্য। এরমধ্যে তারা নতুন সরকার গঠন করেছে। এটা তো আইনের লঙ্ঘন। আবার ওবায়দুল কাদের বলছেন, বিরোধী দল কারা হবে?
গয়েশ্বর বলেন, নির্বাচন ঘোষণা দিয়ে গণভবনে ঘন ঘন বৈঠক করেছে। তৃণমূল দল করলো। কিন্তু সেটাও ছাগলে খেয়ে ফেললো। আজকে ৭ শতাংশ মানুষ ভোট দিতে যায়নি। আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আইডি কার্ড নিয়ে নিজেরা নিজেরা ভোট দিয়েছে। সরকারের বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কার্ড নিয়ে জোর করে ভোট দিতে বাধ্য করেছে। কিন্তু ভোট কেন্দ্রে শিয়াল কুকুর ছাড়া কিছুই খুঁজে পাওয়া যায় নি।
তিনি আরও বলেন, সেদিন একজন বিজিবি সদস্যকে হত্যা করেছে। কেনো কীসের অধিকারে তারা এটা করছে? কেনো একটা প্রতিবাদ নেই? আজকে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন। কারণ অন্য কেউ যখন দেশের সিদ্ধান্ত নেয় তখন তো আমার সার্বভৌমত্ব থাকে না।
গয়েশ্বর বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে শেখ হাসিনা সাত পার্সেন্ট ভোটের মালিক। আর ৯৩ শতাংশ মানুষের নেতা তারেক রহমান। সরকারের মানসম্মান ও লাজ শরম থাকলে জনগণের ভোটাধিকার ফেরত দেন। দেখেন ১ শতাংশ ভোট পান কি না?
গয়েশ্বর আরও বলেন, সরকার কেবলই লুটপাট করে। তারা চায়না থেকে টাকা এনে ১০ টাকা খরচ করে আর ভাউচার লেখে ২০০ টাকা। এই লুটপাট দেশের মানুষ মানতে পারে না। আমরা রাজপথে আছি এবং রাজপথেই থাকবো। সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য যদি মৃত্যু হয় হবে। শিয়াল কুকুরের মতো বাঁচতে চাই না। সিংহের মতো বাঁচতে চাই। আমাদের কতো মারতে পারবেন মারেন না! তারপরও আপনার ধ্বংস অনিবার্য।
সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপির কি দায় পড়েছে যে হিন্দু বাড়িতে লুটপাট করবো?
তিনি আরো বলেন, আমাদের বিজয় হবেই ইনশাআল্লাহ। আমাদের নেতা তারেক রহমান। যিনি ৭ জানুয়ারি দেশের ১৮ কোটি মানুষের নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী ৩০ জানুয়ারি অবৈধ সংসদের প্রথম অধিবেশনের দিন রাজপথে আবারও কালো পতাকা মিছিল হবে।
বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, আজকে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার জন্য আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিলেন! আর যেদিন সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে দেশ ছাড়া করলেন তখন কী হয়েছিলো? তাহলে প্রধান বিচারপতির পদটা কতটা কলঙ্কিত করলেন?
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, আমরা অবৈধ অগণতান্ত্রিক সরকারের পদত্যাগ ঘটাতে রাজপথে নেমেছি। সরকার কালোপাতাকার কালো চিহ্নে নিশ্চিহ্ন হয়ে বিদায় নিতে বাধ্য হবে। গত ৭ জানুয়ারি দেশের জনগণ এই সরকারকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করেছে। সেদিন সরকারের নৈতিক পরাজয় হয়েছে। তারা সেদিন পুলিশ দিয়ে গায়ের জোরে রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে নির্বাচন করেছে। সরকার যত শতাংশ ভোট দেখাতে চেয়েছিলে সেই মোতাবেক নির্বাচন কমিশন ভোট কাস্টিং দেখিয়েছে। সুতরাং কত শতাংশ ভোট পড়েছে সেটি কথা নয়। সেদিন কোনো ভোট হয়নি।
তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের জন্য রাজনীতি করে। বিএনপি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে না। বিএনপি দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশের শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন চায়। কারণ এই দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিল দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে। জনগণ কখনোই বাকশালি শাসন মানেনি এবং মানবে না।
মঈন খান বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল কারো কাছে মাথা নত করতে নয়। দিল্লির শাসন দিয়ে কোনোদিন বাংলাদেশ চলেনি আজকেও দেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আওয়ামী লীগ ঔপনিবেশিক প্রক্রিয়ায় দেশ শাসন করছে। তারা দেশে বিভাজন তৈরি করেছে।
তিনি বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগের সুমতি ফিরে আসুক যে তারা বাকশাল থেকে পিছু হটবে। আমরা তারেক রহমানের নেতৃত্বে রাজপথে ছিলাম এখনো আছি এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদের সঞ্চালনায় মিছিল পূর্ব বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী প্রমুখ।
মিছিলে বিএনপির কেন্দ্রীয়, মহানগর ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, শিরিন সুলতানা, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, তাইফুল ইসলাম টিপু, কাজী রওনকুল ইসলাম টিপু, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, কাদের গণি চৌধুরী, রফিক শিকদার, ঢাকা জেলা বিএনপির খন্দকার আবু আশফাক, নিপুন রায় চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, নাজমুল হাসান, মৎস্যজীবী দলের মো. আবদুর রহিম, ওলামা দলের শাহ মো. নেছারুল হক, কাজী মো. সেলিম রেজা, ছাত্রদলের আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, পেশাজীবী নেতাদের মধ্যে প্রকৌশলী মো. মোস্তাফা-ই জামান সেলিম, প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান চুন্নু, প্রকৌশলী মাহবুব আলম, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, শ্রমিক দল, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দলে হাজারো নেতাকর্মী ও সমর্থক কালো পতাকা হাতে নিয়ে মিছিলে অংশগ্রহণ করেন।