কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা ইন্দা উত্তরহাটি এলাকায় আদম আলী ও রেশেনা খাতুন দম্পতির ছয় সন্তানের পর জন্ম নেয় যমজ দুই ছেলে। একসঙ্গে হওয়ায় মা-বাবা আদর করে দুই ছেলের নাম রাখেন জামাল ও কামাল। জন্মের পাঁচ বছর পর্যন্ত সুস্থই ছিলেন তাঁরা। কিন্তু পাঁচ বছর পর থেকে অজানা এক রোগে দুই ভাইয়ের মাংসপেশি শুকিয়ে পা চিকন হয়ে যেতে থাকে। হারাতে থাকে স্বাভাবিক চলাফেরার শক্তিও। এভাবেই একসময় জামাল ও কামাল পুরোপুরি পঙ্গু হয়ে যান। শারীরিক প্রতিবন্ধী দুই ছেলেকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন মা–বাবা।
প্রতি মাসে দুই থেকে তিনবার কিশোরগঞ্জ সদরের যশোদল এলাকায় শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য তাঁদের আসতে হয়। সেই সঙ্গে পড়াশোনার জন্য যেতে হয় মাদ্রাসায়।
কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আতাউর রহমান বলেন, ডিএমডি রোগ হলো একটিটা জন্মগত রোগ। জন্মের সময় বোঝা না গেলেও কিছুদিন পর থেকে মাংসপেশি শুকিয়ে যেতে থাকে। একটিসময় হাঁটাচলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এ রোগের নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই।
আদম আলী দীর্ঘদিন ধরে কিডনি, হার্ট ও শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছেন। তাঁদের বাকি ছয় সন্তান যাঁর যাঁর সংসার নিয়ে ব্যস্ত। জামাল ও কামালের সব দেখভাল রেশেনাকেই করতে হয়। কোলে করে দুই ছেলেকে শৌচাগারে নিয়ে যেতে হয় পঞ্চাশোর্ধ্ব তাঁকেই। দুই ছেলের শারীরিক পরিচর্যাও করতে হয় রেশেনাকেই।
রেশেনা খাতুন প্রায় চার বছর ধরে তাঁর দুই সন্তান বমির সমস্যায় ভুগছেন। খাওয়ার পর কোনো কিছু তাঁদের হজম হচ্ছে না। এক ছেলের কোনো সমস্যা হলে অন্য ছেলেও একই সমস্যায় ভোগেন।
রেশেনা আরও বলেন, তাঁর পাঁচ ছেলে ও তিন মেয়ে। এর মধ্যে সবার ছোট যমজ জামাল ও কামাল। তাঁদের জন্য প্রতি মাসে ওষুধ খরচ বাবদ চার হাজার টাকা লাগে। মাদ্রাসায় যাতায়াত ও মাসে অন্তত দুবার হাসপাতালে যাওয়া-আসা করতে অনেক খরচ। সংসারই চলে না, এত খরচ কীভাবে চলাবেন—ভেবে কোনো কূলকিনারা করতে পারচ্ছেন না তিনি।