প্রফেসর ড. মোঃ রাশেদুল ইসলাম
রাষ্ট্রের উন্নয়ন তথা অর্থনৈতিক চালিকাশক্তির অন্যতম উপাদান শ্রম। এই উপাদান তখনই কার্যকর ও উৎপাদনশীল যখন এই পেশার সাথে জড়িত বিশাল জনগোষ্ঠী অর্থাৎ শ্রমজীবী ও মেহনতি মানুষেরা উত্তম কর্মপরিবেশে নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করে পরিবারের সবার মুখে হাসি ফোটাতে পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে, নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের যে মুক্তির ইতিহাস, সেখানে শ্রমজীবী ও মেহনতি মানুষের অবদান অনস্বীকার্য। এই উপলব্ধি থেকেই জাতির পিতা বলেছিলেন “এই স্বাধীনতা তখনি আমার কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা হয়ে উঠবে, যখন বাংলার কৃষক-মজুর ও দুঃখী মানুষের সকল দুঃখের অবসান হবে”। সেই লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তিনি।
জাতির পিতার সুযোগ্য উত্তরসূরী ও বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা শ্রমজীবী মানুষের অধিকার বাস্তবায়নে বিশেষ করে শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নির্ধারণ, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং শিল্পে শান্তি স্থিতিশীলতা বজায় রাখার মধ্য দিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিতকরণে যুগোপযোগী ও আধুনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। জাতীয় অর্থনীতিতে গার্মেন্টস শিল্প সেক্টরের গুরুত্বের বিষয় বিবেচনা করে মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন ও সম্পর্ক উন্নয়ন এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও ব্যবস্থা গ্রহণ করে সরকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক সুনাম অর্জনে সমর্থ হয়েছে।
বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের সার্বিক কল্যাণ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণ এবং নারী শ্রমিকদের ক্ষমতায়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তন্মধ্যে আইএলও (ILO) এর সহায়তায় শ্রমিক, মালিক এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যৌথ স্বাক্ষরে পোশাকশিল্পে অগ্নি নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি ত্রিপক্ষীয় জাতীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। যার ফলশ্রুতিতে ভবনে নিরাপত্তা সংযুক্ত করে, উত্তম কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা হচ্ছে। এছাড়াও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পোশাক শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও উত্তম কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে গার্মেন্টস শিল্পে কর্মরত শ্রমিক/কর্মচারীর জেন্ডার সচেতনতা বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
শ্রমিকদের কল্যাণে বর্তমান সরকার বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ বাস্তবায়ন, বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ সংশোধন, শ্রমিকদের অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধি, অগ্নি ও ভবন নিরাপত্তা বিষয়ক কার্যক্রম, জাতীয় শ্রমনীতি ২০১২ প্রণয়ন, শিশুশ্রম নিরসন নীতি ২০১০ প্রণয়ন, জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য সেফটি নীতিমালা ২০১২ প্রণয়ন, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়নের নীতি ২০১১ প্রণয়ন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিল গঠনের মাধ্যমে শ্রমিকদের বিপদে-আপদে পাশে থেকে দেশের অর্থনীতির অন্যতম অনুষঙ্গ শ্রমশক্তির নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্তরের প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শতাধিক মৃত শ্রমিকের পরিবার ও শ্রমিকের মেধাবী সন্তানদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। যার মধ্য দিয়ে সংস্থাটির প্রচার ও সুনাম বৃদ্ধি সহ সরকারের কল্যাণমুখী ভাবমূর্তি সমুজ্জল হয়েছে।
শ্রমিকদের সন্তানের উচ্চ শিক্ষার জন্য আর্থিক সহায়তা হিসেবে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন হতে এ পর্যন্ত ২০০০ এর অধিক জনকে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে। যৌথ বীমাভুক্ত শ্রমিকদের বার্ষিক প্রিমিয়াম বাবদ টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে এ ফাউন্ডেশন এর মাধ্যমে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে দুষ্কৃতিকারীদের পেট্রোল বোমা ও আগুনে দগ্ধ হয়ে যারা চিকিৎসাধীন ছিলেন এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন এমন শতাধিক শ্রমিক বা শ্রমিকের পরিবারকে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা বা অনুদান প্রদান করা হয়েছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত ১৫ বছরে যে সকল যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন, তার সবই ছিল শ্রমজীবী ও মেহনতী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর প্রয়াস। বিশেষ করে শ্রম আইন বাস্তবায়ন এবং তা পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যুগোপযোগীকরণ, জাতীয় শ্রমনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, দক্ষ জনশক্তি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ/পুনঃ নির্ধারণ, শিশুশ্রম নিরসন, নিরাপদ কর্ম পরিবেশ সৃষ্টি। সরকার যেমন শ্রমিকদের স্বার্থ বিবেচনা করে আধুনিক ও যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকেই এই শিল্পকে রক্ষা করতে একসাথে কাজ করতে হবে। তবেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ ও স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জননেত্রী শেখ হাসিনার ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব হবে বলে বিশ্বাস করি।
লেখক: চেয়ারম্যান, জেনেটিক্স এন্ড এনিম্যাল ব্রিডিং বিভাগ, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)।