নিজস্ব প্রতিবেদক
‘আমরা বারবার বাংলাদেশ সরকারের কাছে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক হুমকিমূলক বক্তব্যের বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। আমরা তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে, কূটনৈতিক সম্পর্কের ভিয়েনা কনভেনশনের অধীনে মার্কিন কূটনৈতিক মিশন এবং কর্মীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তাদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এবং আমরা আশা করি তারা সেই দায়িত্ব পালন করবে।’
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিক বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে হত্যার হুমকির বিষয়ে প্রশ্ন করলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এসব কথা বলেন। এসময় তিনি এও বলেন, বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আবারও নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি বলছে, বাংলাদেশের জনগণের মতোই যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভিয়েনা চুক্তি এককভাবে বাংলাদেশকে মেনে চলতে হবে এমনতো না। সেই চুক্তিভঙ্গকারী নানা কিছু যুক্তরাষ্ট্র করছে। তারা সেটা একবার উচ্চারণও করছে না। ভিয়েনা করভেনশন মানার কথা মনে করিয়ে দেওয়াটা একপাক্ষিক আচরণ বলেও মন্তব্য তাদের।
উল্লেখ্য, কূটনীতিকদের আচরণ বিষয়ে যে চুক্তিটি ১৯৬১ সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণে সই করা হয়েছিল সেটি ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপলোম্যাটিক রিলেশন হিসেবে পরিচিত। এই কনভেনশনে মোট ৫৩টি আর্টিকেল বা ধারা রয়েছে। এই চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল কিছু নিয়ম-নীতি এবং সেগুলো অনুসরণের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়ন।
বৃহস্পতিবারের ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে হত্যার হুমকির বিষয়টি তোলা হয়। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, কূটনীতিকদের ওপর হামলা ও সহিংসতার হুমকি অগ্রহণযোগ্য। এছাড়া পিটার হাসকে হুমকির ঘটনায় বাংলাদেশ সরকারের কাছে যুক্তরাষ্ট্র বারবার উদ্বেগ জানিয়েছে বলেও ব্রিফিংয়ে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশর নির্বাচন নিয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলে জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আসন্ন নির্বাচনের বিষয়ে আমরা ধারাবাহিক যে বার্তা দিয়ে এসেছি এবং ভোটের দিন ঘোষণার পরও এখনও সেই বার্তাই রয়ে গেছে। বাংলাদেশের জনগণ নিজেদের জন্য যা চায় যুক্তরাষ্ট্র ঠিক সেটিই চায়: (আর সেটি হচ্ছে) অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বাংলাদেশে আলাদা করে কোনও একটি রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করি না; আমরা একটি রাজনৈতিক দলের ওপর অন্য রাজনৈতিক দলকে প্রাধান্য দিই না। আমরা সকল পক্ষকে সংযম প্রদর্শন, সহিংসতা এড়াতে এবং শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাই।
পরে ওই সাংবাদিক বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে হত্যার হুমকির বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বাংলাদেশকে ভিয়েনা কনভেনশন মনে করিয়ে দেন।
ভিয়েনা কনভেনশনের যে ধারা বাইরের দেশগুলোকে বাংলাদেশের পক্ষে মনে করিয়ে দেওয়ার আছে সেটা হলো চুক্তির ৪১ নম্বর ধারা। সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এই ধারার এক নম্বর উপধারার উল্লেখ করে বলেন, যেসব ব্যক্তি অন্য কোন দেশে কূটনীতিকের মর্যাদা ও সুবিধা ভোগ করেন তারা ওই দেশের আইন ও নীতি মেনে চলতে বাধ্য থাকবেন। এছাড়া তারা ওই দেশের অভ্যন্তরীণ কোন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। এটা নিয়ম। জাপানের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করার পর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাকে এই উপধারাটি মেনে চলার কথাই বলা হয়েছিল। পিটার হাস অবিরাম যে সংযোগগুলো স্থাপন করতে চেষ্টা করে চলেছেন সেটা যদি ‘আভ্যন্তরীণ’ হস্তক্ষেপ বিবেচিত হয় তবে তিনি ভিয়েনা চুক্তি লঙ্ঘন করেছেন।