নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করার পরপরই দেশের বিভিন্ন এলাকায় যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচন প্রতিহতের নামে ধ্বংসাত্বক কাজে লিপ্ত হয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট ও তাদের শরিকরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অবরোধ হরতালে জ্বালাও পোড়ায়ের মাধ্যমে যে জনগনকে সম্পৃক্ত করা সম্ভব হয়নি সেটা স্পষ্ট। রাগ ক্ষোভের জায়গায় থেকে দেশের সম্পদ নস্ট করার রাজনীতি করলে সে দায় বিএনপি জামায়াতকে নিতে হবে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে জ্বালা-পোড়াও সংস্কৃতি যেনো আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে বিএনপি-জামায়াত জোট ও তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকে হরতাল ও অবরোধের কর্মসূচী চলছে নিয়মিত বিরতি দিয়ে। এসব কর্মসূচীকে ঘিরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যানবাহনে নিয়মিত অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে।
অবরোধ কর্মসূচির মধ্যেই তফসিল ঘোষণা পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলে। সেখানে রেলওয়ে স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি কমিউটার ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এতে ট্রেনটির দুটি বগি পুরোপুরি পুড়ে যায় এবং একটি বগি আংশিক পুড়ে গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, গভীর রাতে কমিউটার ট্রেনটি টাঙ্গাইল থেকে ঢাকামুখী লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল। আগুনে ট্রেনের ইঞ্জিনের কাছাকাছি দুটি বগি পুরোপুরি এবং একটি বগি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার পর পরই বুধবার দিবাগত রাতে টাঙ্গাইলে কমিউটার ট্রেনে আগুন দেওয়া ঘটনা ঘটল। এ ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে যেমন আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, তেমনি তাদের সামনে বিএনপি-জামায়াতের পুরোনো চরিত্র ভেসে উঠেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, বাংলাদেশের রেলওয়ে খাত যখন সামনের দিকে আগাচ্ছে, যখন নতুন নতুন ট্রেন লাইন নির্মাণ হচ্ছে, ট্রেনের গতি বাড়াতে যখন নতুন ইঞ্জিন আনা হয়েছে, সংযোজন করা হয়েছে নতুন নতুন কোচ, তখন রেলকে ধংসের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে বিএনপি-জামায়াত জোট। যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় এবং পিছনের দিকে টেনে নিতে চায়। এতে দেশের সম্পদেরই ক্ষতি হয়েছে।
বুধবার রাতে টাঙ্গাইলে কমিউটটার ট্রেনে আগু দিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট কার্যত নির্বাচন প্রতিহত করার নামে দেশকে পঙ্গু বানাতে চেষ্টা করছে। তাদের এই অপতৎপরতা প্রতিহত করার কথা বলেছেন অনেকে। এদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ের সম্পদ রক্ষায় সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে রেলওয়ে পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় সংঘর্ষের মধ্যে বিএনপির সমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে হরতাল-অবরোধ দিয়ে আসছে বিএনপি- জামায়াত এবং সমমনা দলগুলো। বুধবার সকালে শুরু হয়েছে তাদের পঞ্চম দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ। এই কর্মসূচির মধ্যে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে আগুন দেওয়া হচ্ছে।
টাঙ্গাইলে কমিউটার ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনা জনমনে রীতিমত ভয় ও আতঙ্ক তৈররি পাশাপাশি ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের কথা সাধারণ মানুষকে মনে করিয়ে দিচ্ছে। ওই সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচন প্রতিহতের নামে সারাদেশে চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছিল। জ্বালাও-পোড়াও, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, যাত্রীবাহী পরিবহনে অগ্নিসংযোগ করে মানুষ হত্যা, এমনকি দেশের বিভিন্ন এলাকায় ট্রেনের লাইন কেটে ফেলা, ট্রেনে হামলা, ইঞ্জিন পুড়িয়ে দেওয়াসহ নানারকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছিল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুভাষ সিংহ রায় মনে করেন এধরনের টানা কর্মসূচির মধ্যে দেশের সম্পদ বিনস্ট করার যে চক্রান্ত তার সঙ্গে জনগনের কোন সম্পৃক্ততা নেই এবং বিএনপি জামায়াতের এই কর্মকান্ড বিষয়ে জনগন অবগত। তিনি বলেন, এই রাজনীতি করতে চাইলে বিএনপি কখনোই জনগনকে পাশে পাবে না। ফলে একদিকে সরকারের অব্যাহত উন্নয়নের প্রচেষ্টা আর আরেকদিকে দেশের সম্পদ নস্টকারী এই সহিংস দল চিনে নিতে জনগনের কস্ট হয় না।
টাঙ্গাইলে কমিউটার ট্রেনে অগ্নিসংযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, যারা তথাকথিত হরতাল-অবরোধ ডেকেছে এটি সেই বিএনপি-জামায়াতের কাজ। তারা হরতাল-অবরোধের নাম দেশের সম্পদ নষ্ট করছে, রেলওয়ের সম্পদ নষ্ট করছে। তারা জনগণের জন্য আন্দোলনের কথা বলে জনগণকেই পুড়িয়ে মারছে। রেলমন্ত্রী বলেন, এই যে গত কয়েকদিনে বিএনপি-জামায়াত দেশের বিভিন্ন স্থানে যনবাহনে অগ্নিসংযোগ করেছে তারাই ট্রেনে আগুন দিয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়েছে জানিয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, যারা অগ্নিসংযোগ করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে এবং তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।