ডেস্ক: ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশ হাইতি। দেশটির একটি কারাগারে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে প্রায় চার হাজার বন্দি ছিনিয়ে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।
এসব কারাবন্দির মধ্যে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মোয়েসের হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত গ্যাং সদস্যরাও ছিলেন।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, হাইতির রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের প্রধান কারাগারে হামলা চালায় সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা। এরপর প্রায় ৪ হাজার বন্দির অধিকাংশই পালিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এক সাংবাদিক।
দরিদ্রতম দেশ হাইতিতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সহিংসতা আরও খারাপ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরিকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া সশস্ত্র দলগুলো হাইতির রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সহিংসতার সর্বশেষ এই পর্ব শুরু হয় গত বৃহস্পতিবার। ওইদিন হাইতিতে কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক নিরাপত্তা বাহিনী পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা করতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নাইরোবি সফরে যান।
এরপরই গ্যাং নেতা জিমি চেরিজিয়ার (ডাকনাম ‘বারবিকিউ’) তাকে (প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি) অপসারণের জন্য সমন্বিত আক্রমণ চালানোর কথা ঘোষণা করেন। সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “আমরা সবাই, প্রাদেশিক শহরের সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং রাজধানীর সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ঐক্যবদ্ধ।”
জিমি চেরিজিয়ার নামের এই গ্যাং নেতা রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশ কয়েকটি গণহত্যার পেছনে রয়েছে বলে মনে করা হয়।
সমন্বিত আক্রমণ চালানোর ঘোষণা দেওয়ার পর গোলাগুলিতে চার পুলিশ কর্মকর্তা নিহত এবং আরও পাঁচজন আহত হয়।
এরপর ইউনিয়ন পোর্ট-অ-প্রিন্সের প্রধান ওই কারাগারটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে সামরিক বাহিনীকে সাহায্য করতে বলেছিল হাইতির পুলিশ। কিন্তু শনিবার গভীর রাতে ওই কারাগার কম্পাউন্ডে হামলা হয়।
ওই হামলার পর রবিবার কারাগারের দরজা খোলা ছিল এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের কোনও চিহ্ন সেখানে দেখা যায়নি। এ সময় প্রায় সব বন্দিই পালিয়ে যায়। তবে পালানোর চেষ্টা করা তিন বন্দি কারাগারের আঙিনার মধ্যে মৃত অবস্থায় পড়েছিল বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
একজন স্বেচ্ছাসেবক কারাগার কর্মী বলেছেন, ৯৯ জন বন্দি- যার মধ্যে সাবেক কলম্বিয়ান সৈন্যরাও রয়েছেন- যারা প্রেসিডেন্ট মোয়েসের হত্যার জন্য জেলে ছিল – ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার ভয়ে কারাগারে থাকাকেই বেছে নিয়েছিলেন।
মূলত সাবেক প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মোয়েসের হত্যাকাণ্ডের পর থেকে হাইতিতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। তার স্থলাভিষিক্ত কাউকে করা হয়নি এবং ২০১৬ সাল থেকে ক্যারিবীয় অঞ্চলের এই দেশটিতে নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়নি।
যদিও একটি রাজনৈতিক চুক্তির আওতায় হাইতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল এবং অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি গত ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পদত্যাগ করার কথা ছিল, কিন্তু সেটি হয়নি। সূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান