দৈ. কি.ডেস্ক : প্রয়াত চিত্রনায়ক সালমান শাহ চলচ্চিত্রে পা রাখেন ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মধ্য দিয়ে। খুব অল্প সময়েই দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে হয়ে উঠেছিলেন সবার স্বপ্নের নায়ক। গত ১৯ সেপ্টেম্বর ছিল ক্ষণজন্মা এই নায়কের শুভ জন্মদিন। বেঁচে থাকলে ৫৩ বছরে পা রাখতেন তিনি।
তবে সালমান শাহর পরিবার মনে করে, এই নায়কের মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না। পরিকল্পিতভাবে ‘হত্যা’ করা হয়েছিল তাকে। এমন অভিযোগ এনে সালমানের মা নীলা চৌধুরী আইনের আশ্রয়ও নিয়েছেন। তার অভিযোগের আঙুল, সালমানের স্ত্রী সামিরার দিকে। শুধু তাই নয়, সামিরাকে করা হয়েছে মামলার এক নম্বর আসামিও।
সালমানের মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি গণমাধ্যমের মুখোমুখি না হলেও যা বলেছেন আদালতেই। সংবাদমাধ্যমে দু-একটি সাক্ষাৎকার দিলেও সবসময় চেয়েছেন নিজেকে আড়াল রাখতে।
আপনারা কি সংসার জীবনে সুখী ছিলেন না
এমন প্রশ্ন সামিরাকে করলে উত্তরে তিনি বলেন, ‘কেন না! আমরা দুজন দুজনকে অনেক ভালোবাসতাম। আমি অনেক হ্যাপি ছিলাম। আমাদের মধ্যে মনোমালিন্য হলে ইমন তা ভরিয়ে দিত ভালোবাসা দিয়ে।’
৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ সালে কী হয়েছিল যার কারণে সালমান আত্মহত্যা করল? সামিরা বলেন, ‘আত্মহত্যা করার মতো তেমন কিছুই হয়নি। সেদিন ওর সঙ্গে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছিল। একটা পর্যায়ে অভিমান করে ও রুমে চলে যায় আর দরজা বন্ধ করে দেয়। আমি তখন অন্য রুমে ছিলাম। এর মধ্যেই সব কিছু ঘটে যায়। আমার চিৎকার শুনে ফ্লাটের লোকজন ছুটে আসে। খবর পেয়ে ইমনের মা-ও ছুটে আসে। এরপর রুম থেকে বেরিয়ে আসে ওর ঝুলন্ত দেহ।’
তিনি আরো বলেন, ‘এমন কথা কাটাকাটি ওর সঙ্গে আগেও হয়েছে। আমার ওপর অনেক অভিমানও করেছিল ও। আরেকটা বিষয় ইমন কিন্তু এর আগেও তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু চতুর্থবার ওকে আর ফেরানো যায়নি। আপনার যদি খোঁজ নেন, তাহলে সেটি জানতে পারবেন।’
কী কারণে তিনবার আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন এমনটা জানতে চাইলে সামিরা বলেন, ‘কেন সেটি আমার সঠিক জানা নেই। তিনবারই ছিল আমার বিয়ের আগে। দুইবার ওকে মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ও একবার ওকে নেয়া হয় বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে। আপনারা চাইলে হাসপাতালের রেকর্ড চেক করে দেখতে পারেন। আসলে, মানসিকভাবে ওর মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাটা বেশি কাজ করত।’
মৌসুমী ছিলেন সালমান শাহর প্রথম নায়িকা। তবে খুব বেশি সিনেমাতে দেখা যায়নি তাকে। সালমান শাহর বেশিরভাগ সিনেমার নায়িকা ছিলেন শাবনূর। পরবর্তী সময়ে সালমান শাহ এবং শাবনূরের প্রেমের গুঞ্জনও শোনা যায়।
কীভাবে শাবনূরের সঙ্গে সালমান শাহর অভিনয়ের শুরু সে প্রসঙ্গে সামিরা বলেন, সালমান শাহ এবং মৌসুমী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অভিনয় না করার। এই ঘটনার শুরু একটা সিনেমার শুটিং সেট থেকে। শুটিং এর সময়ে খুব ছোট একটা বিষয় নিয়ে মৌসুমীর মা এবং সালমান শাহয়ের মায়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরবর্তীতে সালমান শাহ এবং মৌসুমী সিদ্ধান্ত নেয় তারা একসঙ্গে সিনেমা করবে না। এরপর আমরা নায়িকা সংকটের মধ্যে দিয়ে যাই। তখন শাবনাজ এবং নাইম বিয়ে করেন। বিয়ের পর গুজন শুরু হয় শাবনাজ অভিনয় ছেড়ে দিবেন। তখন তাই নতুন নায়িকা খুঁজতে হয়। পরে আমরা শাবনূরকে দেখার পর সিদ্ধান্ত নেই ওর সঙ্গেই কাজ করা হবে।
সালমান শাহ এবং শাবনূরের প্রেমের গুঞ্জন নিয়ে তিনি বলেন, এই বিষয়টা এত সহজে বলা যায় না। এর পেছনে অনেক বড় গল্প আছে। সেই গল্পটা আমি শুরু করলে শেষ করতে অনেক সময় লেগে যাবে। সালমান শাহ এবং শাবনূরের মধ্যে কোনো সম্পর্ক ছিল কিনা তাহলে আমি এক বাক্যে বলবো যে হ্যা তাদের সম্পর্ক ছিল।
শাবনূরের সঙ্গে সম্পর্কের রেশ ধরে সালমান শাহর সঙ্গে সমস্যা হতো কিনা সে প্রসঙ্গে সামিরা বলেন, হ্যা এই বিষয়টা নিয়ে সমস্যা হয়েছে। আমি রাগ করে আমার বাবার বাসাতেও চলে গিয়েছিলাম। সালমান শাহ আমাকে অনেক বুঝিয়েছিল এমনকি মাফও চেয়েছিল। আমাকে মানিয়ে নিয়ে আসে। আমি দুইমাস পর ঢাকায় আমাদের বাসায় ফিরে আসি। সালমান শাহ
আমাকে বলেছিল সে শাবনূরের সঙ্গে যে সিনেমাগুলোর চুক্তি আছে সেগুলো শেষ হলেই তার সঙ্গে আর কোনো সিনেমায় কাজ করবে না। আমরা নতুন নায়িকা খুঁজব। সে সব কথাগুলো রেখেছিল।
উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় সালমান শাহের। স্মার্টনেস ও ব্যক্তিত্ববোধের কারণে রাতারাতি তরুণ প্রজন্মের আইকনে পরিণত হন তিনি। চার বছরের ক্যারিয়ারে ২৭টি ছবিতে অভিনয় করেন এই নায়ক। যার অধিকাংশই ছিলো সুপারহিট।
