নিজস্ব প্রতিবেদক
সিলেট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বুধবার হজরত শাহজালাল ও হজরত শাহ পরানের মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে সিলেট সফর শুরু করেন তিনি। এরপর সিলেটের আলিয়া মাদরাসা মাঠে নির্বাচনী জনসভায় যোগ দেন। এসময় শেখ হাসিনা বলেন, আগুন নিয়ে খেলতে গেলে আগুনেই হাত পোড়ে এটা বিএনপির মনে রাখা উচিত।
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) সিলেটে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে নির্বাচনি জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালের নির্বাচনে আমাদেরকে ক্ষমতায় আসতে দিলো না। কেন দিলো না? দিলো না এই কারণে – বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাস। ওই আমেরিকা প্রস্তাব করলো গ্যাস বিক্রি করতে হবে। কারণ আমেরিকান কোম্পানি এখানে গ্যাস উত্তোলন করে। আমি বলেছি- গ্যাস বিক্রি করবো না। এই গ্যাস আমার জনগণের গ্যাস, এই গ্যাস জনগণের কাজে ব্যবহার হবে। আমি বিদ্যুৎ দিবো, সার কারখানা করবো, জনগণের কল্যাণে ব্যয় করে ৫০ বছরের মজুত নিশ্চিত করার পর যদি কিছু থাকে তাহলে বিক্রি করবো। তারা খুব নাখোশ হলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন আমাকে ক্ষমতায় আসতে দিবে না। তার সঙ্গে আমাদের দেশেরও কিছু লোক ছিল। ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসলো বিএনপি-জামায়াত জোট।’
তিনি বলেন, ‘যে বিএনপি ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোট চুরি করেছিল, ভোট চুরির অপরাধে এদেশের মানুষ আন্দোলন করে খালেদা জিয়াকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। সেই ক্ষমতাচ্যুত , ভোটচোর, জনগণের সম্পদ চোর বিএনপিকে ক্ষমতায় বসালো কারচুপির মাধ্যমে। গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েছিল খালেদা জিয়া, সে ক্ষমতায় গেলে গ্যাস বিক্রি করবে। সেজন্য তার পিঠে বাহবা দিয়ে ক্ষমতায় বসালো। ফলাফল হচ্ছে- জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, দুঃশাসন। আমি বলেছিলাম – খালেদা জিয়া গ্যাস দিতে পারবে না। কারণ গ্যাস পাবেই না। আসলে পায়নি , দিতে পারেনি। এটা হচ্ছে বাস্তবতা। যেই জায়গায় গ্যাস পায়নি সেই একই জায়গায় কুপ খনন করে আওয়ামীলীগের আমলে আমরা শুধু গ্যাস না এবার আমরা তেলও পেয়েছি। আল্লাহ যখন কাউকে কিছু দেয় , তিনি জন বুঝে ধন দেয়। এটাই আল্লাহর কাজ। উনি জানে ওদের কাছে দিলে ওরা নয়ছয় করবে, আর আওয়ামী লীগের হাতে দিলে জনগণের কল্যাণে কাজে লাগবে।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘বিএনপি আগুন দিয়ে মানুষ মারে। এর বিরুদ্ধে আপনাদের সকলকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মানুষের জীবন কেড়ে নেবে, মানুষকে ভোট দিতে দেবে না, নির্বাচন বন্ধ করবে, এত সাহস কোথা থেকে পায়। ওই লন্ডনে বসে এক কুলাঙ্গার হুকুম দেয়, আর কিছু লোক এখানে আগুন নিয়ে খেলে। আগুন নিয়ে খেলতে গেলে আগুনেই হাত পোড়ে এটা তাদের মনে রাখা উচিত।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যখন উন্নয়ন করছি তখন বিএনপির কাজ হচ্ছে আগুন দিয়ে মানুষ পড়ানো। কোন মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ থাকলে এইভাবে আগুন দিয়ে মা -শিশু , মা সন্তানকে বুকের মধ্যে ধরে রেখেছে, সেই মা আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে শিশুসহ। আজকে আগুন দিয়ে রেল, বাস , গাড়ি পোড়াচ্ছে। শুধু এখনই না, ২০১৩ সালের অগ্নিসন্ত্রাস। তখন ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল। সেই নির্বাচন ঠেকানোর নামে এই বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করে। ৫৮২ স্কুল-ভোট কেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়, ৭০টি সরকারি অফিস ভাঙ্গে, ছয়টি ভুমি অফিস ভাঙ্গে, ৩ হাজার ২৫২টি গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিল, যেখানে মানুষও পুড়ে কয়লা হয়ে গিয়েছিল। ২৯টি রেলগাড়ি, ২টি লঞ্চ তারা পুড়িয়েছে। ২০১৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত অগ্নিসন্ত্রাসে ৩ হাজার মানুষ পুড়িয়েছে , ৫০০ মানুষ মারা যায়। এখনো মানুষ পোড়া ঘা নিয়ে কষ্ট করে জীবনযাপন করছে। অগ্নি সন্ত্রাস করে তারা নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জনগণ ভোট দিয়েছে আমাদের, আমরা সরকারে এসেছি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তারা অংশ নিল। কিন্তু তারা ভোট চাইবে কি? লন্ডনে বসে একজন নমিনেশন দেয় একটা, গুলশান অফিসে আরেকটা, পল্টন বসে আরেকটা। নমিনেশন বাণিজ্য শুরু করে দিল। এই বাণিজ্য করেই তাদের নির্বাচন শেষ।’
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিকেল ৩টা ১১ মিনিটে তিনি সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠের জনসভা মঞ্চে উপস্থিত হন। এরপর মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন। এ সময় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী তাকে করতালির মাধ্যমে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা।
সিলেটের এ জনসভার মধ্য দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনসভায় যোগ দেওয়ার আগে তিনি হজরত শাহজালাল ও শাহপরানের (র.) মাজার জিয়ারত করেন।