স্টাফ রিপোর্টার:ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সাম্প্রতিক সীমান্ত হত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে সীমান্ত সমস্যা সমাধানের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে বিএসএফ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) একযোগে কাজ করবে বলে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে জানানো হয়। এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলি সাবরিন ভারতের দুঃখ প্রকাশ করার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও কোন ফর্মেটে ভারত বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছে তা খোলাসা করেননি। গত ২৩শে জানুয়ারি বিএসএফ সদস্যদের গুলিতে আহত বিজিবি সদস্য রইস উদ্দিন ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে তিস্তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে: এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করের আমন্ত্রণে তার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে আগামী ৭ই ফেব্রুয়ারি নয়াদিল্লি যাচ্ছেন। ৯ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি ভারত সফর করবেন। সেই সফরে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়টি আলোচনায় আসবে কিনা? জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করছি। তিস্তা নদীকে ঘিরে চীনের প্রস্তাবিত প্রকল্পের বিষয়টি দিল্লির আলোচনায় উঠবে কিনা? এমন প্রশ্নে মুখপাত্র বলেন, যদি ভারত এ ব্যাপারে কিছু জানতে চায়, তখনই কেবল বাংলাদেশ বিষয়টি নিয়ে আলোচনার কথা ভেবে দেখবে। ওই সফরে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরও জোরদার করতে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য, যোগাযোগ, জ¦ালানি সহযোগিতা ও জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগসহ পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হওয়ার ইঙ্গিত দেন মুখপাত্র। উল্লেখ্য, ভারতের বিদেশমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদকে নয়াদিল্লি সফরের আমন্ত্রণ জানান। ১১ই জানুয়ারি নতুন মন্ত্রিসভার শপথের পরপরই ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ওই আমন্ত্রণপত্র হস্তান্তর করেন।
মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সতর্ক বাংলাদেশ: এদিকে রাখাইন পরিস্থিতি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র সেহেলি সাবরিন বলেন, রাখাইনে চলমান সংঘাত মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
তবে এই সংঘাতে বাংলাদেশ বা আমাদের নাগরিক যেন কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং নতুন অনুপ্রবেশ না ঘটে সে বিষয়ে বিশেষভাবে নজর রাখা হচ্ছে। মিয়ানমারে আমাদের দুইটি কূটনৈতিক মিশন রয়েছে। সিটুয়্যে তে আমাদের মিশন এবং নেপিদোতে (ইয়াংগুনে) দূতাবাস বিষয়টির সার্বিক পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োজনে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। তিনি আরও বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতি এবং সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে সরকারের সব কর্তৃপক্ষ এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ঢাকাস্থ মিয়ানমার দূতাবাসের সঙ্গে নিবিড় ও ত্বরিত যোগাযোগ রক্ষা করছে মন্ত্রণালয়। এ ছাড়াও আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে মিয়ানমারের প্রতিপক্ষের যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। উল্লেখ্য, ন্যাম সম্মেলনে যোগ দিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত মাসে উগান্ডায় বহুপক্ষীয় সফর শুরু করেন। তৃতীয় ইইউ ইন্দো-প্যাসিফিক মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে তিনি এখন বেলজিয়ামের ব্রাসেলস সফরে রয়েছেন।
ব্রিফিংয়ে উত্থাপিত অন্যান্য প্রসঙ্গ: ওদিকে সীমান্ত হত্যাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে ভারত নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব জোরদার হচ্ছে জানিয়ে এক সাংবাদিক জানতে চান, দুই দেশের জনগণের পর্যায়ে বন্ধুত্বের যখন সোনালি অধ্যায় অতিক্রম করছে সেই সময়ে এমন মনোভাব ঠেকাতে বাংলাদেশ কোনো কাজ করছে কিনা? জবাবে মুখপাত্র সেহেলি সাবরিন বলেন, যাদের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে, তাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় সীমান্তের সমস্যা ও মানুষে মানুষে যোগাযোগ বাড়ানো মূলত ভিসার বিষয়টি সব সময়ে থাকে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় সফরে সীমান্ত ও ভিসা নিয়ে আলোচনা হবে। ৭ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর সরকার প্রধানকে কোন দেশ আগে অভিনন্দন জানিয়েছে, ভারত নাকি চীন? এমন প্রশ্নে সেহেলি সাবরিন বলেন, এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে কোনো তথ্য নেই। বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্য বর্জনের একটি প্রচারণা চলছে, এ বিষয়টি আলোচনায় থাকবে কিনা? এমন প্রশ্নে মুখপাত্র বলেন, সফরের আগে দুই দেশ ঠিক করে আলোচনার বিষয়বস্তু কি হবে। এ বিষয়ে এখনো কাজ চলছে। বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ব্যবহার নিয়ে ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিষয়বস্তু জানতে চাইলে মুখপাত্র বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা পোর্ট ব্যবহার নিয়ে ২০১৮ সালে চুক্তি হয়েছিল। বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০২৩ সালের ২৪শে এপ্রিল একটি স্থায়ী আদেশ জারি করে। যার ফলে ভারত তখন থেকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা পোর্ট ব্যবহার করতে পারবে। এ ধরনের চুক্তির ক্ষেত্রে সাধারণভাবে যে সকল শর্তাবলী প্রযোজ্য হয়, এ চুক্তিও সে সকল বিষয় বিবেচনায় রেখে করা হয়েছে।