কাজী মাকসুদুর রহমান
বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টর একটি উল্লেখযোগ্য ডিজিটাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতও এর ব্যতিক্রম নয়। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিজ্ঞার বাস্তবায়ন হিসেবে স্বাস্থ্যখাতেও ডিজিটালাইজেশন শুরু হয়েছে।
স্বাস্থ্যখাতের ডিজিটালাইজেশন মানুষের খাটুনি কমিয়ে সেবার মান নিশ্চিত করার মাধ্যমে রোগী এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদেরকে আরও পরিতৃপ্ত করে তুলবে এমনটাই প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি স্বাস্থ্যসেবায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্জন ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এবং সারা বিশ্বের নজর কেড়েছে। “সকল নাগরিকদের দোরগোড়ায় মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা” পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে সরকারের ২০১০ সালের “ডিজিটাল বাংলাদেশ” ভিশন, ডিজিটাল স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে আরও ত্বরান্বিত করেছে।
সেই থেকে বাংলাদেশ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিস্তারে আরও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। গত এক দশকে দেশের স্বাস্থ্যখাতে উল্লেখযোগ্য যতো প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং বিপ্লব, সবই ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ভিশনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
নিম্নলিখিত উন্নয়ন ও কার্যকলাপসমূহ এর অন্তর্ভুক্ত—বাল্ক মেসেজিং সেবা, ভিডিও কনফারেন্সিং, ডিস্ট্রিক্ট হেলথ ইনফরমেশন সফ্টওয়্যার ২ (ডিএইচআইএস২), ডিজিটাল ড্যাশবোর্ড, শেয়ার্ড হেলথ রেকর্ড (এসআরএইচ) সিস্টেম, ন্যাশনাল হেলথ ডেটা ওয়ারহাউস, ডিজিটাল হেলথ হাব, টেলিমেডিসিন, টেলিকনসালটেশন, ই-প্রেসক্রিপশন, এবং ই-রেফারেল।
প্রেসক্রিপশন ড্রাগ ডেলিভারি, অ্যাট-হোম ডায়াগনস্টিকস, এবং অনলাইনে ডাক্তারদের পরামর্শসহ এমন ব্যাপক সেবা প্রদানের জন্য দেশব্যাপী মোবাইল নেটওয়ার্ক সংযোগের মতো বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করার মাধ্যমে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা ফার্মগুলো একটি জোয়ার নিয়ে এসেছে।
তাছাড়া, স্বাস্থ্য তথ্য সিস্টেমের (এইচআইএস) জন্য ডাটা আদান-প্রদানের সুবিধা, নকল প্রতিরোধ, স্বাস্থ্যসেবার সাথে সম্পৃক্ত এসডিজি সূচকসমূহের অগ্রগতি নিশ্চিত করা এবং প্রমাণ-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকে সমর্থন করার উদ্দেশ্যে ফ্র্যাগমেন্টেড ডাটা সিস্টেমগুলোকে একক ডাটা ভান্ডারে রুপান্তরিত করা হয়েছে৷
স্বাস্থ্য তথ্য সিস্টেম (এইচআইএস) এর জন্য তৈরি করা আইসিটি অবকাঠামোর মাধ্যমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দক্ষতা, এবং স্বাস্থ্যসেবার বিধান সবকিছুরই প্রসার ঘটানো হয়েছে।
বাংলাদেশ তার ডিজিটাল হেলথ স্ট্র্যাটেজি (২০২১-২০২৫) সম্পন্ন করার খুবই সন্নিকটে, যা পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি সাধনের জন্য ন্যাশনাল পলিসি ইনিশিয়েটিভগুলোকে নির্দেশ করবে।
এছাড়া ‘স্বাস্থ্য বাতায়ন’ ১৬২৬৩ সার্বক্ষণিক কল সেন্টারের মাধ্যমে সারা দেশ থেকে যেকোনো মানুষ যেকোনো সময় স্বাস্থ্যসেবা-সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য জানতে পারছে। আবার জাতীয় তথ্য বাতায়ন ৩৩৩, সুখী পরিবার ১৬৭৬৭ এবং আইইডিসিআরের ১০৬৫৫ নাম্বারে ফোন করে টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করতে পারছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা ডিজিটাল করা হচ্ছে, যেখানে অসংখ্য সুবিধার পাশাপাশি এই প্রক্রিয়ার বেশ কিছু অপূর্ণতাও রয়েছে, যেমন ইউজার-ফ্রেন্ডলি অ্যাপ্লিকেশনের অভাব, অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষা, বিশ্বস্ততার স্বল্পতা, জরুরী ডায়াগনস্টিক সার্ভিসসমূহে অ্যাক্সেস পাওয়ার ক্ষেত্রে ঝামেলা, টেলিমেডিসিনের জটিলতা ও পর্যবেক্ষণযোগ্যতা সম্পর্কে গুরুগম্ভীর উদ্বেগ, অপর্যাপ্ত নেটওয়ার্ক ও পাওয়ার সাপ্লাই, এবং এই পদ্ধতির সাথে সম্পৃক্ত আর্থিক অসুবিধা।
যাই হোক, সীমাবদ্ধতা সর্বত্র বিদ্যমান কিন্তু ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার সাফল্যের কথা বিবেচনা করে, ডিজিটাল স্বাস্থ্য থেকে সম্পূর্ণরূপে উপকৃত হওয়ার জন্য, বাংলাদেশের নাগরিকদের মঙ্গলের জন্য গ্রহণযোগ্য এবং উপযুক্ত ডিজিটালাইজেশন প্রয়োজন, সেই কারণে বর্তমান সরকারের বিকল্প নেই, তাই আমাদের আবারও আস্থা রাখতে হবে শেখ হাসিনার প্রতি।
লেখক: প্রভাষক, জনস্বাস্থ্য বিভাগ, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।