ডেস্ক:সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। প্রথম ইনিংসে লঙ্কানদের ২৮০ রানের জবাবে বাংলাদেশ ১৮৮ রানে অলআউট হয়ে যায়। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪১৮ রান করে লঙ্কানরা। ৫১১ রানের লক্ষ্যে নেমে তৃতীয় দিনের শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে ৪৭ রান করেছে বাংলাদেশ।
টেস্টের দ্বিতীয় দিনেই দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমেছিল শ্রীলঙ্কা। তখন থেকেই ছিল বড় রান হয়ে যাওয়ার শঙ্কা। ধনঞ্জয়া ডি সিলভার সঙ্গী হয়ে দিন শেষ করেছিলেন ‘নাইটওয়াচম্যান হিসেবে’ নামা বিশ্ব ফার্নান্দো। ৫ উইকেট হাতে ২১১ রানের লিড নিয়ে মাঠে নামে শ্রীলঙ্কা।
আগের দিন নাইটওয়াচম্যান হিসেবে ব্যাটিংয়ে নামা বিশ্ব ফার্নান্দো তৃতীয় দিনে দ্রুতই ফেরেন। তাকে মিরাজের হাতে ক্যাচ বানিয়ে খালেদ আহমেদ পেয়ে যান নিজের প্রথম উইকেটের দেখা। তখনও শ্রীলঙ্কার রান কেবল ১২৬।
এরপর অধিনায়ক ধনঞ্জয়া ডি সিলভার সঙ্গী হন সেই কামিন্দু মেন্ডিস। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয়টিতেও ভুগিয়েছে তাদের জুটি। দুজন ব্যক্তিগত সেঞ্চুরির সঙ্গে ২০২ রানের জুটিতে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসেও তাদের জুটি ছিল ১৭৩ রানের।
প্রথম সেশনের শেষদিকে এসে কিছুটা আক্রমণাত্মকও হয়ে ওঠেন দুই ব্যাটার। এর মধ্যে ধনঞ্জয়া পেয়ে যান সেঞ্চুরির দেখা, ১৮৪ বলে ব্যক্তিগত সংগ্রহ তিন অঙ্কে নিয়ে যান তিনি। তাকে ফিরিয়েই বড় জুটিটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
তার বলে পুল করতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে দেন তিনি। আরও একটি দুর্দান্ত ইনিংসের ইতি ঘটে তাতে। দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করা ধনঞ্জয়া ৯ চার ও ২ ছক্কায় ১৭৯ বলে ১০৮ রান করে আউট হন। তার বিদায়ের পর অপেক্ষা ছিল কামিন্দুর সেঞ্চুরির জন্য।
চা বিরতিতে যাওয়ার আগেই সেটি পেয়ে যান তিনি। সাত বা তার নিচে নেমে এই প্রথম কোনো ব্যাটার এক টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরির নজির গড়েন।
ধনঞ্জয়াকে সঙ্গী করে একটি রেকর্ড গড়েন মেন্ডিসও। এক টেস্টে একই দলের দুই ব্যাটারের জোড়া সেঞ্চুরির ঘটনা ক্রিকেট ইতিহাসে এই নিয়ে তৃতীয়বার ঘটেছে। ১৯৭৪ সালে প্রথম এই কীর্তি গড়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার দুই ভাই গ্রেগ চ্যাপেল ও ইয়ান চ্যাপেল। এর ৪০ বছর পর সেই স্মৃতি ফেরান পাকিস্তানের আজহার আলী ও মিসবাহ উল হক।
কামিন্দু অবশ্য সেঞ্চুরিতে থেমে যাননি। পরে বরং বাংলাদেশের বোলারদের ওপর আরও বেশি চড়াও হন। তিনি যখন শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হন, ততক্ষণে শ্রীলঙ্কার লিড ছাড়িয়ে গেছে পাঁচশ। ১৬ চার ও ৬ ছক্কায় ২৩৭ বলে ১৬৪ রান করে আউট হন কামিন্দু।
৫১১ রানের পাহাড়সম পথ পাড়ি দেওয়া বাংলাদেশের জন্য প্রায় অসম্ভব এক ব্যাপার। তবুও কত লম্বা সময় স্বাগতিকরা ব্যাট করতে পারে- সেটিই ছিল দেখার। কিন্তু ওই পরীক্ষায় খুব বাজেভাবেই ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাটিং ছিল রীতিমতো যাচ্ছেতাই।
শুরুটা হয় মাহমুদুল হাসান জয়কে দিয়ে। ইনিংসের কেবল চতুর্থ বলে কোনো রান করার আগেই আউট হয়ে যান এই ওপেনার। এরপর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও ফিরেছেন দ্রুত। আনুষ্ঠানিকভাবে অধিনায়ক হওয়ার পর নিজের প্রথম টেস্ট ইনিংসে ৫ রান করেছিলেন শান্ত, দ্বিতীয়টিতে করেছেন ছয় রান। কসুন রাজিথার অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বলে ব্যাট চালাতে গিয়ে প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো করুনারত্নের হাতে ক্যাচ দেন তিনি।
এরপর জাকির হাসানের সঙ্গে মুমিনুল হকের জুটি একটু ভরসা যোগাতে শুরু করেছিল। ২২ বলে ১৯ রান করে আউট হন জাকির। লাহিরু কুমারার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি। শাহাদাৎ হোসেন দীপুও নিজের মুখোমুখি হওয়া তৃতীয় বলে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দেন।
তবে বাজে ব্যাটিং দৃষ্টান্তের সবকিছুকেই যেন ছাড়িয়ে যান লিটন দাস। প্রথম বলেই ক্রিজ থেকে বেরিয়ে এসে ক্রস ব্যাটে চালাতে যান মিডউইকেটের ওপর দিয়ে। কিন্তু অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ক্যাচ নেন উইকেটের কাছাকাছি জায়গা থেকেই।
তার এমন বাজে ব্যাটিংয়ের পর অন্য পাশে অবশ্য টিকে থাকেন মুমিনুল হক। ২৯ বলে ৭ রান করে অপরাজিত আছেন তিনি। তার সঙ্গে চতুর্থ দিন বাংলাদেশের ইনিংস শুরু করবেন তাইজুল ইসলাম (৬)।