দৈ. কি.ডেস্ক : দেশের বিভিন্ন স্থানে রেললাইন, বিশেষত মিটারগেজ লাইন বেঁকে যাচ্ছে। গত বছরও তীব্র গরমের সময়ে এমনটি ঘটেছিল। রেলসংশ্লিষ্টরা এ পরিস্থিতির জন্য শুধু সূর্যের তাপের ওপর দায় চাপাচ্ছেন।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কোনো কোনো স্থানসহ আরও অনেক দেশে সূর্যের তাপ এর চেয়ে বেশি হলেও সেসব দেশ থেকে রেললাইন বাঁকা হওয়ার কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না কেন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত কিংবা উন্নত দেশের রেললাইনের পাত তুলনামূলক প্রশস্ত। অতিরিক্ত তাপমাত্রা সেই পাতকে ঘায়েল করতে পারে না। স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে রেললাইনের তাপ ১০ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেশি হতে পারে। কিন্তু ৬০ থেকে ৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হলেও ওইসব দেশে রেললাইন বাঁকা হয় না।
কাজেই আমাদের দেশে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার প্রকৃত কারণ কী তা চিহ্নিত করা জরুরি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রেললাইন বেঁকে যাওয়ার কারণ রোদের তাপ নয়, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও ত্রুটি। বস্তুত ব্রিটিশ আমলে তৈরি আমাদের দেশের অনেক স্থানের রেললাইনের অবস্থা চরম জরাজীর্ণ। লাইনে পর্যাপ্ত পাথর থাকে না; স্লিপার নড়বড়ে, হুক-ক্লিপ-নাটবল্টুহীন, ফিশপ্লেট পড়ে থাকে খোলা অবস্থায়, নেই যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা। এ অবস্থায় বর্তমান দাবদাহে বাঁকা হয়ে যাচ্ছে রেললাইন। এর ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
অস্বীকার করার সুযোগ নেই, দেশের রেললাইনগুলো দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে প্রায়ই ঘটছে লাইনচ্যুতির ঘটনা। ঝুঁকিপূর্ণ লাইনের কারণে কমে গেছে রেলের গতি। অভিযোগ আছে, ঝুঁকিপূর্ণ রেলপথ মেরামতসহ কিছু প্রকল্প বাবদ কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের পরও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। জানা যায়, সারা দেশে বিদ্যমান রেলপথের অর্ধেকের বেশি এখনো চরম ঝুঁকিপূর্ণ। পাশাপাশি রেলব্রিজগুলোর অবস্থাও শোচনীয়। এ অবস্থায় রেললাইনগুলোর মেরামত ও সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। রেললাইনের নিয়মিত তদারকিও প্রয়োজন।
এক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। দূর করতে হবে এ খাতে বিদ্যমান সব ধরনের দুর্নীতি ও অব্যবস্থা। মোট কথা, রেলের প্রকৃত উন্নয়নে দৃষ্টি দিতে হবে। যোগাযোগের এ মাধ্যমটিকে গতিশীল, ঝুঁকিহীন ও আরামদায়ক করা গেলে রেলকে লাভজনক সংস্থা হিসাবে দাঁড় করানো অসম্ভব নয়। সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে জরাজীর্ণ লাইন সংস্কার, চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ সেতু মেরামতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের পদক্ষেপ নেবে, এটাই কাম্য।