কিশোরগঞ্জ জেলার এক ঐতিহ্যেবাহী নদী ‘নরসুন্দা’। এ নদীর আরেক নাম ‘নাগচিনি’।কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার কাওনায় বাঁধের কারণে অনেক আগেই প্রবাহ হারিয়েছে নরসুন্দা নদী। এখন দখল আর দূষণে তা মৃতপ্রায়। দিন যত যাচ্ছে, ততই নাজুক হচ্ছে পরিস্থিতি। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নদীর পাড়ের প্রায় ৮২ শতাংশ জায়গা দখল করে আছেন ৪১ জন। তবে স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা বলছেন, দখলদারের সংখ্যা কমপক্ষে ৪০০ জন হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, পাকুন্দিয়ার পাশ দিয়ে বয়ে চলা ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে নরসুন্দার শুরু। প্রায় ৬৭ কিলোমিটার বয়ে যাওয়ার পর এটি ইটনায় ধনু নদীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। দেখা গেছে, কচুরিপানা পচে নদীর পানি কালো বর্ণ ধারণ করেছে, সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। কোথাও কোথাও তা ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দখল হয়ে আছে পাড়সহ মাঝ নদীও। জেগে ওঠা ছোট ছোট চরে অনেকে ফসল চাষ করছেন।
নরসুন্দা রক্ষা ও কিশোরগঞ্জ শহর উন্নয়নে ২০১২ সালে ‘নরসুন্দা নদী পুনর্বাসন ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভাসংলগ্ন এলাকা উন্নয়ন’ নামের একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। সংস্থাটি দুই দফা সময় বাড়িয়ে ২০১৬ সালে কাজ শেষ করে
নরসুন্দা নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনতে পুনঃখননের জন্য সরকারিভাবে বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বেশ কয়েকবার। কিন্তু কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের পরও নদীটির করুণ অবস্থার উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি; বরং কিশোরগঞ্জ শহরের ভেতরের অংশ এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। শহরের কাচারি বাজার, বড় বাজারসহ কয়েকটি বাজারের সব ময়লা-আবর্জনা ও জবাই করা পশুর বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীতে। দুর্গন্ধে দুর্বিষহ জীবন পার করতে হচ্ছে মানুষকে। নদীর পাড় দিয়ে চলতে হলে নাক চেপে ধরে চলাচল করতে হয়। নদীর পাড় দিয়ে বানানো ওয়াকওয়ের অবস্থা আরও শোচনীয়। নদীর তীর বলতে যে সুন্দর, স্বাস্থ্যকর ও নান্দনিক পরিবেশ অনুমান করা হয়, সেটি এখানে অনুপস্থিত।