ঢাকা১ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  1. ! Без рубрики
  2. Echt Geld Casino
  3. test2
  4. অর্থনীতি
  5. আন্তর্জাতিক
  6. আরো
  7. এক্সক্লুসিভ
  8. খেলাধুলা
  9. জাতীয়
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. দেশজুড়ে
  12. প্রেস বিজ্ঞপ্তি
  13. বাণিজ্য
  14. বিনোদন
  15. বিশ্বজমিন

সবুজ তরমুজের ভেতরে লাল

admin
মার্চ ২৩, ২০২৪ ৮:৪৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

তরমুজে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ, বি, সি। ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য তরমুজ বেশ উপকারী। গ্রীষ্মকালীন এই ফলের রস আমাদের ত্বকের পানিশূন্যতা দূর করে। ভিটামিন এ শুধু ত্বক নয়-চোখ, চুল, নখ, দাঁতসহ সব অঙ্গের পুষ্টির জন্য খুবই জরুরি। গ্রীষ্মকালীন এই ফলে পানি রয়েছে শতকরা প্রায় ৯৩-৯৫ ভাগ। এসব কারণে মানুষ সুযোগ পেলেই তরমুজ খায়। পবিত্র রমজানের মাস চলছে, এই মাসে লোকেরা তরমুজ একটু বেশিই খায়। এই সুযোগে তরমুজ ব্যবসায়ীরা নানান কারসাজি শুরু করেছেন। যেমন খুশি দাম হাঁকাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে কথাসাহিত্যিক সুমন রহমান তরমুজ কিনতে গেছেন ভৈরব বাজারে।
দোকানদার বলল, ‘লালের গ্যারান্টি। কড়া লাল না হলে নিবেন না।’
তিনি দেখেশুনে তরমুজ কিনলেন। কেনার পর তরমুজ কাটা হলো। দেখা গেল, হালকা লাল। তিনি ক্ষুব্ধ হলেন। বললেন, ‘নিব না। আরেকটা দেন।’ দোকানদার তার দিকে তাকিয়ে একমুহূর্ত ভাবল। তারপর জানতে চাইল,
‘ভাইজান কি শহর কমিটিতে আছেন?’
’না।’
‘উপজেলা কমপ্লেক্সে মনে হয় দেখেছি আপনাকে। কোয়ার্টারে থাকেন?’
‘দেখেন নাই। আমি ঢাকা থাকি।’
‘অহ… তাইলে আপনের অত লালের কী দরকার?’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে দেখা যাচ্ছে, তরমুজ ব্যবসায়ীদের ওপর অনেক কবি সাহিত্যিকই ক্ষেপে আছেন। কবি প্রবর রিপন লিখেছেন, এক তরমুজ বিক্রেতা আমাকে প্রথম মানুষকে অবিশ্বাস করা শিখিয়েছিল।
তরমুজ এখন ভাইরাল, আমি নিজেও তার প্রভাবমুক্ত নই। বন্ধুর বাসায় ইফতার করতে যাচ্ছি। যাওয়ার পথে তরমুজ কিনে নিলাম। বাজার থেকে হেঁটে মোড়ের দিকে যাচ্ছি। রাস্তায় ৪ জন জিজ্ঞাসা করল দাম কত নিয়েছে? তরমুজ কিনলাম নাকি কোরবানির গরু বুঝলাম না। ইফতার পার্টিতে অনেকে বলছেন জাতীয় ফল হওয়া উচিত তরমুজ। তরমুজ মানে লাল-সবুজ।

 

 

তরমুজের বাইরে সবুজ, ভেতরে লাল। অথচ আমি তরমুজ বিচিসহ খাওয়া যাবে কি না এই সিদ্ধান্ত নিতেই জীবনের অর্ধেকটা কাটিয়ে দিলাম। অস্ট্রেলিয়ার তরমুজগুলোতে বিচি নেই। ওখানকার লোকদের কিন্তু তরমুজ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে হচ্ছে না।
এবার তরমুজ সম্পর্কে একটা রাজনৈতিক তথ্য জেনে নেওয়া যাক। ১৯৮২ সালের এপ্রিলে ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে শহিদ হয় ৭ বছর বয়সি ফিলিস্তিনি কিশোর সুহাইন গাবিন। তার স্মরণে একটি চিত্রকর্ম অঙ্কন করেন তার চাচা, শিল্পী ফাতহি গাবিন।
ছবিতে দেখা যায়, ব্যাকগ্রাউন্ডে একদল ফিলিস্তিনি যুবক বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে। আর তাদের সামনে মাটিতে পড়ে আছে গুলি খাওয়া ৭ বছর বয়সি সুহাইন।
কিন্তু ছবির সবচেয়ে নজরকাড়া অংশটি ছিল এর রঙের ব্যবহার। সুহাইনের গায়ে ছিল সবুজ এবং সাদা চেকের সোয়েটার, তার পরনে ছিল কালো রঙের ট্রাউজার, আর তার বুকে বুলেটের তাজা ছিদ্র থেকে বেরিয়ে আসা রক্তের রং ছিল লাল। এই চারটি রং ছিল ফিলিস্তিনের জাতীয় পতাকার রং। ওই ছবিটি আঁকার জন্য ইসরাইলি পুলিশ ফাতহি গাবিনকে গ্রেফতার করে।
পরে তার ছয় মাসের কারাদণ্ড হয়। কারণ আশির দশক থেকে শুরু করে অসলো অ্যাকর্ড স্বাক্ষরিত হওয়া পর্যন্ত ইসরাইলি সামরিক আইনে শুধু যে ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন করাই নিষিদ্ধ ছিল, তা-ই না, পতাকার রঙের প্রতীক ব্যবহার করাও নিষিদ্ধ ছিল।
শুধু ফাতহি গাবিন নয়, ছবিতে লাল-সাদা-সবুজ-কালো রং ব্যবহার করার দায়ে ইসরাইল নাবিল আনানি, সিলিমান মানসুর, এসাম বাদরসহ আরও অনেক আর্টিস্টকে আটক করে। ক্ষুব্ধ এসাম বাদর ইসরাইলি পুলিশকে জিজ্ঞেস করেন, তাহলে আমি যদি শুধু একটা তরমুজ আঁকি, সেটার কী হবে? পুলিশ উত্তর দেয়, সেটাও বাজেয়াফত করা হবে।
পরে অনেক ফিলিস্তিনিকে বিভিন্ন মিছিলে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে কাটা তরমুজ বহন করতে দেখা যায়। এবং নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ইসরাইলি পুলিশ শুধু কাটা তরমুজ বহন করার দায়ে অনেক ফিলিস্তিনিকে আটক করে।
মানুষের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো ঠিকমতো কাজ করতে দরকার শরীরে পর্যাপ্ত পানির জোগান বা শরীর সিক্ত রাখা। শরীরের তাপমাত্রার নিয়ন্ত্রণ, অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম, কোষে পুষ্টি প্রবেশের মতো বিষয়গুলো নির্ভর করে পর্যাপ্ত পানি বা তরল গ্রহণের ওপর। তরমুজের মতো প্রচুর তরলযুক্ত ফল থেকে আসতে পারে পর্যাপ্ত পানির জোগান, যা শরীরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করতে পারে। তরমুজে প্রায় ৯৫ শতাংশ পানি রয়েছে, যা দেহের দৈনিক তরলের চাহিদা পূরণে ভালো ভূমিকা রাখতে পারে।
এসব কারণে আড়াইহাজার বাজারে তরমুজ ব্যবসায়ীর সামনে ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে বললেন, আমি একটা তরমুজ কিনতে চাই! কত টাকা বিক্রি করলে আপনার লস হবে না, লাভ হবে-দাম বলেন? ব্যবসায়ী বলল ১৫০ টাকা। ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব বাজারে উপস্থিত সাধারণ মানুষকে উদ্দেশ করে বললেন, আপনারা যারা এখনও তরমুজ কিনে খেতে পারেননি, ১৫০ টাকা দাম দিয়ে তরমুজ কিনে নিন। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে ৫ মিনিটের মধ্যে সব তরমুজ শেষ। গণমাধ্যমে ম্যাজিস্ট্রেটকে অভিনন্দন জানিয়ে সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে।
তরমুজ নিয়ে মূলত ঝামেলাটি শুরু হয় কয়েক বছর আগে, যখন তরমুজ বিক্রেতারা কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করতে শুরু করেন। ক্রেতার সঙ্গে বিক্রেতার প্রায়ই বাগ্ববিতণ্ডা দেখা যেত। ক্রেতার আপত্তি অত্যন্ত লজিক্যাল। কেজিতে যদি তরমুজ বিক্রিই হয়, খোসার দাম কেন দিব?
অনেকে কিনতে গিয়ে বিক্রেতাকে বিষয়টা বোঝানোর চেষ্টা করছেন, ওজন মেপে যা দাম হবে তার ৩০ শতাংশ কম নেবেন… কারণ একটা তরমুজের খোসার ওজনই টোটালের ৩০ শতাংশ।
‘তো?’
‘খোসা রেখে দেন।’
‘খোসা কেমনে রাখুম?’
‘দাম দিয়ে আমি খোসা কেন নিব?’
‘আমি খালি খোসা দিয়ে কী করতাম?’
ক্রেতার সঙ্গে তর্কে না পেরে হাতাহাতিও করতে দেখা গেছে তরমুজ বিক্রেতাদের।
তরমুজ পিস হিসেবে কিনে কেজি দরে বিক্রি করা যাবে না বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এমনকি ন্যায্যমূল্যে তরমুজ বিক্রি করার উদ্যোগও নিয়েছে টিসিবি। সময়ের আলোতে এসেছে, ২১ মার্চ সকালে কারওয়ান বাজারে টিসিবি ভবনের সামনে ন্যায্যমূল্যে তরমুজ বিক্রি কার্যক্রম উদ্বোধনের সময় ভোক্তা অধিদফতরের মহাপরিচালক কেজিদরে বিক্রির এ নিষেধাজ্ঞা দেন।
তরমুজ হাতের নাগালে রাখতে নেওয়া হয়েছে ব্যক্তি থেকে শুরু করে নানা সরকারি উদ্যোগ। কম দামে মাংস বিক্রি করতে থাকা ব্যবসায়ী খলিল এখন জাতীয় তারকা। তার দেখানো পথ ধরে বিভিন্ন জায়গায় আরও কয়েকজনকে কমদামে মাংস বিক্রি করে তারকাখ্যাতি পাওয়ার চেষ্টা করছেন। এ পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য সুখবর, খলিল কম দামে তরমুজ বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রত্যাশা করি, তার উদ্যোগ সফল হোক।
ভোক্তার মহাপরিচালক বলেছেন, ‘বিক্রেতারা তরমুজ যেভাবে কিনবেন, সেভাবেই বিক্রি করতে হবে। কেউ পিস হিসেবে কিনলে তা কেজিদরে বিক্রির সুযোগ নেই। যিনি কেজি হিসেবে কিনবেন, তিনি কেজি হিসেবে বিক্রি করবেন। তবে এর পক্ষে পাকা ভাউচার থাকতে হবে। তা না হলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।’
এর ফলে তরমুজের দাম অর্ধেকে নেমে আসবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যদি কেউ কেজি হিসেবে বিক্রি করেন, তাহলে ভোক্তারা যেন সেটা প্রত্যাহার করেন এবং ভোক্তা অধিদফতরকে জানান। ভোক্তা অধিদফতর সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’
ভোক্তা অধিদফতরের অভিযানে সম্প্রতি কারওয়ানবাজারে দেখা যায়, ১১ কেজি ওজনের একটা তরমুজ কেনা হয়েছে ২৮০-৩০০ টাকায়। ওই তরমুজ ৭০ টাকা কেজি হিসেবে ৭০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এই অতি মুনাফা বন্ধে অধিদফতর নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে।
টিসিবি থেকে শুরু করে ব্যক্তি উদ্যোগে তরমুজ বিক্রির নানান আয়োজন চলছে। তেমন একজন মৌসুমি বিক্রেতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন, দশ টাকা দরে তরমুজ বিক্রি করব কাল ঢাকায়। শহরের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ দামে কিনতে পারছি। ট্রাকে করে তরমুজ নিয়ে রওনা হয়েছি বরগুনা থেকে। কয়েকশ নিম্নমধ্যবিত্ত এবং দরিদ্র পরিবারকে তরমুজের স্বাদ দিতে পারব এই রোজায়। ভালো রেসপন্স পেলে আরও কয়েক ট্রাক আনতে চাইব বিভিন্ন জেলা থেকে, সরাসরি কৃষক থেকে।
অথচ তারপরও তরমুজ নিয়ে চিন্তায় আছেন কবি ইমতিয়াজ মাহমুদ। তিনি আগে ব‌ই থেকে কোনো রয়্যালটি নিতেন না। গত বছর থেকে নেওয়া শুরু করেছেন। রয়্যালটির অঙ্ক প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, কবিতা লিখে নজরুল গাড়ি কিনছিল, আমি তরমুজ কেনার লেভেলে আছি।
কথাসাহিত্যিক শহীদুল জহিরও তরমুজ নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। আমাদের কুটিরশিল্পের ইতিহাস নামে ম্যাজিক রিয়ালিজম ঘরানায় আস্ত একটা গল্প লেখেন তিনি। গল্পটি থেকে কয়েকটি লাইন তুলে দেওয়া গেল-
‘পুলিশকে আমরা জিজ্ঞেস করি, তরমুজ খাইবেন?
তারা আমাদের ধমক দেয়, ধুত, আমরা হাসি, কারণ, পুলিশ দেখলে আমাদের সব সময় হাসি পায়; আমরা বুঝতে পারি যে, তরমুজ হচ্ছে ঘোড়ার ডিমের মতো, পচে যেতে পারে, ভেজাল হতে পারে না।
আমাদের বড় অস্থিরতা হয়, আমরা পুনরায় মহল্লার তরমুজওয়ালার কাছে যাই এবং জানতে চাই, তরমুজ গাছের ডিম কি না, কিন্তু সে বলে তরমুজে তা দিলে তরমুজ জন্মে না, ঘোড়ার বাচ্চা জন্মে।’  শহীদুল জহিরের গল্পটিতে তরমুজ প্রসেস করে কৌটায় প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি করার প্রস্তাব আছে। জাদুবাস্তবতার প্রভাবে এমন প্রস্তাব কি না সেটা সমালোচকরা ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু সার্বিকভাবে বাজারের যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, কৌটায় ভরে তরমুজ বিক্রি শুরু হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আজ শহীদুল জহিরের মৃত্যুবার্ষিকী। এ সুযোগে বাংলা সাহিত্যের জাদুবাস্তবতার এই কারিগরকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।