দুইবার ‘বাবা’ বলে নিথর হয়ে গেলো ৬ বছরের জাবির ইব্রাহিম

উত্তরা লং মার্চ কর্মসূচিতে পুলিশের গুলিতে ছয় বছর আড়াই মাসের শিশু জাবির ইব্রাহিম নিহত হয়েছে—পরিবার এমন দাবি করেছে। গত মে মাসের ১৯ তারিখে বড় চাচাদের সাথে ঢাকায় ওই কর্মসূচিতে যাওয়ার সময় জাবিরকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয় বলে অভিযোগ করেছেন তার বাবা কবির হোসেন। পরিবারের মতোই যারা জানে, জাবির দুইবার “বাবা” বলে কণ্ঠ ছেঁড়ে পড়ে নিথর হয়ে যায়।
জাবির (৬ বছর ৬ মাস) উত্তরার দক্ষিণখান এলাকার পশ্চিম মোল্লারটেকের পরিবারে জন্মগ্রহণ করে। ছোট থেকে কৌতূহলী ও মিষ্টি স্বভাবের এই শিশুটি মাত্র ছয় মাস আগে স্কুলে ভর্তি হয়েছিল; শিক্ষকরা তাকে নার্সারি ক্লাসে রাখেন। বাবা জানান, ইংরেজি ও গণিতে তার ঝোঁক ছিল এবং স্কুল থেকে ফিরে এলে শেখা কটি বলে দিত — শৈশবের এক উজ্জ্বল ছবি রেখে গেছেন সে।
ঘটনার দিন কবির হোসেন বলেন, তিনি ও পরিবারের অন্যরা ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে বের হয়েছিলেন; সঙ্গে ছিল জাবিরও। উত্তরা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের উত্তর গেটে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পুলিশ গুলি ছোড়ে এবং তাতে জাবির গুলিবিদ্ধ হয়—বাবার কথায়, তখনো জাবির তার হাত ধরে ছিল।
প্রাথমিকভাবে জাবিরকে ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নেওয়া হলে পরে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানান। বাবা দাবি করেছেন, প্রয়োজনীয় রক্ত মেলাতে ও আইসিইউ-সুবিধা না থাকায় রক্ত সংগ্রহ ও স্থানান্তরে প্রায় দুই ঘণ্টা লেগে যায়। পরে ঢাকা স্পেশালাইজড হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতালে কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেও জীবিত রাখা সম্ভব হয়নি।
নিহত জাবিরের মা রোকেয়া বেগম বলেন, তারা কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নয়; তিনি কেবল একজন মা। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় শিশুসহ সাধারণ মানুষকে কিভাবে দমনে পুলিশ ও দলের লোকজন আচরণ করেছে, সেটিই তাকে আঘাত করেছে। তিনি দাবি করেন, সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে—তাই সুষ্ঠু ও দ্রুত বিচার চান।
পরিবার আরও জানিয়েছেন, দাফনকাজেও বাধার সম্মুখীন হতে হয়; শেষ পর্যন্ত রাত দেড়টায় কবর দেওয়া সম্ভব হয়। বাবা কবির হোসেন বলেন, ‘‘ঘটনার দিন আমার হাতেই ছিল সে। সে কাঁধে হেলমেট পরে বলেছিল—আমি বড় হয়েছি, আমাকে তোমাদের সঙ্গে নিতে হবে।’’
জাবির ইব্রাহিমকে এ ঘটনায় শহীদ বলা হচ্ছে পরিবারের ও আন্দোলনকারীদের কাছে; পরিবার মামলা ও আইনি প্রক্রিয়ার জন্য দাবি জানিয়েছেন এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে মানবিক বিচার দাবি করছেন।
এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য বা মন্তব্য পাওয়া যায়নি। ঘটনার সত্যতা বা তদন্ত প্রসঙ্গে কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া পেলে সেটিও প্রকাশ করা হবে।