কাশ্মীরের সবচেয়ে আলোচিত বিচ্ছিন্নতাবাদী ছিলেন ভারতীয় গুপ্তচর—বিস্ফোরক দাবি

কাশ্মীরের আলোচিত বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ইয়াসিন মালিককে ঘিরে নতুন এক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। দিল্লি হাই কোর্টে জমা দেওয়া হলফনামায় মালিক দাবি করেছেন, তিন দশকের বেশি সময় ধরে তিনি ভারতের একাধিক প্রধানমন্ত্রী ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছেন। পাকিস্তানি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁর বৈঠকও ভারতীয় সরকারের অনুমোদিত শান্তি প্রচেষ্টার অংশ ছিল।
২০১৫ সালে জেকেএলএফের চেয়ারম্যান হিসেবে আলোচনায় আসা মালিক প্রথমবার পরিচিত হন ১৯৮৭ সালের বিতর্কিত কাশ্মীর বিধানসভা নির্বাচনের পর। ভোট কারচুপির অভিযোগে তিনি এবং তার সঙ্গীরা পাকিস্তানে চলে যান এবং অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেন। দেশে ফিরে জেকেএলএফের নেতৃত্ব নিয়ে ১৯৮৯ সালে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করেন।
তবে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক দ্রুত খারাপ হয়। মালিক চেয়েছিলেন স্বাধীন কাশ্মীর, পাকিস্তানের সঙ্গে একীকরণ নয়। ১৯৯০ সালে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। পরে মালিক দাবি করেন, তিহার জেলে বা দিল্লির অতিথিশালায় ভারতের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত দেখা হতো এবং সশস্ত্র পথ ত্যাগ করতে উৎসাহ দেওয়া হতো।
মুক্তির পর ১৯৯৪ সালে তিনি সশস্ত্র লড়াই পরিত্যাগ করে অহিংস প্রতিবাদের মাধ্যমে স্বাধীন কাশ্মীরের দাবি জানান। বারবার গ্রেপ্তার হলেও জনপ্রিয়তা বজায় থাকে। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর আবারও গ্রেপ্তার হন, এবং ২০২২ সালে আদালত তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ একাধিক সাজা দেন।
হলফনামার বিস্ফোরক দাবি:
মালিক দাবি করেছেন, নব্বইয়ের দশক থেকে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান এবং অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করেছেন। পাকিস্তানি জঙ্গি হাফিজ সাঈদের সঙ্গে বৈঠকও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার উদ্যোগে। এছাড়া ২০১৬ সালে বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর কাশ্মীরের বিক্ষোভ প্রশমনে গোপন ভূমিকা নিয়েছিলেন।
প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক:
মালিকের দাবিতে ভারতের রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, মালিক দুই দিকেই খেলেছেন। অন্যদিকে সাংবাদিকদের ধারণা, মালিকের দাবি বিশ্বাসযোগ্য।
এই হলফনামা একদিকে ভারতের কাশ্মীর নীতি নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে, অন্যদিকে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের চরিত্র নিয়েও ধোঁয়াশা সৃষ্টি করেছে। মালিক কি সত্যিই শান্তির জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল, নাকি পরিস্থিতি সামলাতে তাঁকে হাতিয়ার বানানো হয়েছিল—এখন সেটিই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।