খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল-এর কলম
শহিদুল আলমের নিরাপত্তা ও মুক্তির জন্য সরকারকে এখনই সর্বোচ্চ কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিতে হবে

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন—এই খবর শুধু একটি ব্যক্তির গ্রেপ্তার নয়, এটি মানবতার ওপর আঘাত। ফিলিস্তিনে চলমান দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ফ্লোটিলা অভিযানে অংশ নিতে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে গিয়ে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হওয়া নতুন কোনো ঘটনা নয়, বরং এটি দীর্ঘদিনের নিপীড়নের ধারাবাহিকতা। কিন্তু এই ঘটনায় বাংলাদেশের সরকারের এখনই দৃঢ় ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
শহিদুল আলম কেবল একজন ফটোজার্নালিস্ট নন, তিনি মানবতার পক্ষের কণ্ঠ। গাজার নিরস্ত্র মানুষদের পক্ষে, সত্যের পক্ষে তাঁর অবস্থান সর্বজনবিদিত। এমন একজন নাগরিককে আন্তর্জাতিক জলসীমায় আটক করা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল। বাংলাদেশ সরকারকে এখনই ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানাতে হবে এবং তাঁর নিরাপত্তা ও অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে জোরালো কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে।
একই সঙ্গে এই ঘটনা আবারও আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল—ইসরায়েলের বর্বরতা ও ফিলিস্তিনে চলমান মানবিক বিপর্যয় কতটা গভীর রূপ নিয়েছে। গাজায় প্রতিদিন মানুষ মরছে, শিশুরা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ছে, হাসপাতাল ও স্কুল ধ্বংস হচ্ছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেও কোনো পরিবর্তন আনতে পারছে না। বরং ইসরায়েল তার দমননীতি আরও বেপরোয়া করে তুলেছে।
আজকের পৃথিবীতে যেখানে মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কথায় কথায় উচ্চারিত হয়, সেখানে শহিদুল আলমের মতো একজন শান্তিপ্রিয় শিল্পীর বন্দিত্ব লজ্জাজনক। এটি কেবল ইসরায়েলের অমানবিক মুখোশ উন্মোচন করে না, বরং আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের ভঙ্গুর বাস্তবতাকেও তুলে ধরে।
বাংলাদেশ সরকার যদি এখনই সরব না হয়, তবে এটি কেবল একজন নাগরিকের নয়—পুরো জাতির মর্যাদার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াবে। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচিত জাতিসংঘ, ওআইসি, এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মাধ্যমে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানানো।
ইসরায়েলের নিপীড়ন বন্ধ হোক, ফিলিস্তিনে শান্তি ফিরুক—এটাই আজ বিশ্বের বিবেকবান মানুষের দাবি। একই সঙ্গে আমরা জোর দাবি জানাই, শহিদুল আলমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাঁকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হোক।
সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো কোনো অপরাধ নয়। শহিদুল আলমের প্রতি অন্যায় মানে মানবতার প্রতি আঘাত। মানবতার এই পরীক্ষা মুহূর্তে বাংলাদেশ যেন তার নাগরিকের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ায়—এই প্রত্যাশাই জাতির।