হন্ডুরাসের নির্বাচনে অস্বচ্ছ হস্তক্ষেপে ফের সমালোচনায় ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বছর লাতিন আমেরিকার রাজনীতিতে অস্বাভাবিকভাবে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। ব্রাজিলে সাবেক প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারোর বিচার স্থগিত করতে চাপ প্রয়োগের চেষ্টা, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ার মিলেইকে রাজনৈতিক সহায়তা এবং ভেনেজুয়েলা–কলম্বিয়া উপকূলে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচিত ‘মাদকবিরোধী অভিযান’—সব ক্ষেত্রেই তার প্রত্যক্ষ প্রভাব স্পষ্ট। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, হন্ডুরাসের সাম্প্রতিক নির্বাচনে ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ সবচেয়ে অস্পষ্ট, বিতর্কিত এবং বিপজ্জনক।
নির্বাচনের চার দিন আগে, গত ২৬ নভেম্বর ট্রাম্প প্রকাশ্যে সমর্থন দেন ডানপন্থি ন্যাশনাল পার্টির প্রার্থী নাস্রি ‘টিটো’ আসফুরাকে। তিনি ঘোষণা করেন, তাদের যৌথ প্রচেষ্টায় ‘নার্কোকমিউনিস্টদের’ মোকাবিলা সম্ভব হবে। ২৮ নভেম্বর ট্রাম্প সতর্ক করে বলেন, আসফুরা ছাড়া অন্য কেউ জয়ী হলে হন্ডুরাসে মার্কিন সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। এর পরপরই তিনি ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মাদকচক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে ৪৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রেসিডেন্ট হুয়ান অরলান্ডো হার্নান্দেজকে ক্ষমা করে দেন। ২ ডিসেম্বর তিনি মুক্তি পান।
এই নাটকীয় পদক্ষেপ ভোটের ফলাফলে ঠিক কতটা প্রভাব ফেলেছে—তা এখনো স্পষ্ট নয়। কেউ কেউ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে ভোটারদের একাংশ আসফুরাকে সমর্থন দিয়েছেন। আবার অনেকে হার্নান্দেজের মুক্তিকে ‘নার্কো–স্টেটের আশঙ্কা’ হিসেবে দেখেছেন এবং ন্যাশনাল পার্টির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। নির্বাচনের রাতে ৩৪ শতাংশ ভোট গণনায় আসফুরা এগিয়ে থাকলেও পরবর্তীতে ব্যবধান দ্রুত কমে যায়। ৩ ডিসেম্বর ৮০ শতাংশ ভোট গণনায় মধ্য–ডানপন্থি লিবারেল পার্টির প্রার্থী ও সাবেক টিভি উপস্থাপক সালভাদোর নাসরালা প্রায় ২০ হাজার ভোটে এগিয়ে যান। চূড়ান্ত ফল ঘোষণার জন্য নির্বাচন কমিশনের ৩০ দিন পর্যন্ত সময় রয়েছে।
হন্ডুরাসের দুর্গম এলাকায় ধীরগতির ভোট পরিবহন ও গণনা এ নির্বাচনে উত্তেজনা আরও বাড়িয়েছে। সেনাবাহিনীর মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যালট রাজধানীতে পৌঁছাতে সময় লাগায় প্রথমদিন শহরভিত্তিক কেন্দ্রের ফল বেশি প্রতিফলিত হয়। এই প্রক্রিয়া ঘনিষ্ঠ লড়াইয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। এর ওপর ২ ডিসেম্বর নাসরালা এগিয়ে যেতেই ট্রাম্পের ‘কারচুপির’ অভিযোগ ও ‘মাশুল দিতে হবে’ ধরনের মন্তব্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বামঘেঁষা প্রেসিডেন্ট সিওমারা কাস্ত্রোর দল লিব্রে–র প্রতি ট্রাম্পের তীব্র বিরাগই তাঁর এমন আচরণের মূল কারণ। তিনি নাসরালাকেও ‘কমিউনিস্ট’ আখ্যা দিয়েছেন, যদিও নাসরালা দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রপন্থি রাজনীতির সমর্থক। অন্যদিকে হার্নান্দেজকে ক্ষমার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের যুক্তি ছিল ‘যৌথ ষড়যন্ত্রের শিকার’—যা বিশেষজ্ঞদের কাছে হাস্যকর ও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ডিইএ কর্মকর্তারা এ সিদ্ধান্তকে ‘অসঙ্গত’ ও ‘মাদকবিরোধী যুদ্ধের প্রতি আঘাত’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
সমালোচকেরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই হস্তক্ষেপ ও রাজনৈতিক নাটকীয়তায় হন্ডুরাসের জরুরি ইস্যু—অর্থনীতি, দুর্নীতি ও অপরাধ দমনের মতো বাস্তব সমস্যাগুলো আড়ালে চলে গেছে। তারা বলছেন, “হন্ডুরাসের জনগণের জীবন–সংগ্রাম নিয়ে ট্রাম্পের কোনো প্রকৃত আগ্রহ নেই; এটি কেবল তাঁর বৃহত্তর রাজনৈতিক নাটকের অংশ মাত্র।”













