জাহাজভাঙা শিল্পে মন্দার মাঝেও আশার আলো ‘গ্রিন ইয়ার্ডে’

দেশের জাহাজভাঙা শিল্প একসময় বৈশ্বিকভাবে আলোচিত ছিল। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপকূলে সারি সারি জাহাজ, হাজারো শ্রমিকের কর্মব্যস্ততা—সব মিলিয়ে সেখানে তৈরি হয়েছিল এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। কিন্তু পরিবেশ দূষণ, শ্রম শোষণ, আন্তর্জাতিক চাপ এবং অর্থনৈতিক মন্দায় সেই চিত্র এখন অনেকটাই বদলে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে শতাধিক ইয়ার্ড, বেকার হয়েছেন হাজারো শ্রমিক। তবু এই মন্দার ভেতর থেকেই নতুন আশা জাগাচ্ছে পরিবেশবান্ধব ‘গ্রিন ইয়ার্ড’ উদ্যোগ।
গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সীতাকুণ্ডে নিবন্ধিত ৮১টি ইয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ২০-২৫টি সক্রিয় আছে। এর মধ্যে ১৭টি ইতোমধ্যে গ্রিন ইয়ার্ডে রূপান্তরিত হয়েছে। এসব ইয়ার্ডে স্ক্র্যাপ জাহাজ কাটা হয় পরিবেশবান্ধব উপায়ে, যা দুর্ঘটনা ও দূষণের ঝুঁকি অনেকটা কমিয়ে আনে।
বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লিং অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক বছরে জাহাজ আমদানির পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে কমেছে। ২০২১ সালে যেখানে ২৮০টি জাহাজ আমদানি হয়েছিল, ২০২৪ সালে তা নেমে এসেছে ১১৪টিতে। এতে স্ক্র্যাপ লোহার যোগানও অর্ধেকে নেমে গেছে।
খাতসংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা জানান, একেকটি ইয়ার্ডে গড়ে ৩০০ জন শ্রমিক কাজ করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বন্ধ হওয়া কারখানাগুলোর কারণে প্রায় অর্ধলাখ শ্রমিক জীবিকা হারিয়েছেন।
এদিকে, আন্তর্জাতিক আইন ও পরিবেশগত মান বজায় রাখতে ২০০৯ সালের হংকং কনভেনশন অনুযায়ী সব জাহাজভাঙা ইয়ার্ডকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গ্রিন ইয়ার্ডে রূপান্তর করতে হবে। ইতোমধ্যে ১৭টি ইয়ার্ড এ সনদ পেয়েছে এবং আরও বেশ কয়েকটি ইয়ার্ড রূপান্তর প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
উদ্যোক্তাদের দাবি, একটি গ্রিন ইয়ার্ড স্থাপনে ২০ থেকে ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়। এ পর্যন্ত শুধুমাত্র এই খাতেই হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ হয়েছে, যা সম্পূর্ণ উদ্যোক্তাদের নিজস্ব অর্থায়নে গড়ে তোলা হয়েছে।
বিএসবিআরএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আমজাদ চৌধুরী বলেন, “যেসব ইয়ার্ড পরিবেশবান্ধব শর্ত পূরণ করতে পারবে না, তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হবে। তবে আমরা সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে আরও কিছুটা সময় চেয়েছি।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরিবেশবান্ধব উদ্যোগে টেকসই শিল্প গড়ে উঠলে বাংলাদেশ আবারও বৈশ্বিক জাহাজভাঙা বাজারে নেতৃত্ব ফিরে পেতে পারে। তবে এজন্য সরকারকে প্রণোদনা ও সহায়তা বাড়াতে হবে বলে তারা মত দিয়েছেন।