নড়াইলে ভ্যানচালক কিশোর আলিফ হত্যার রহস্য উন্মোচন, দুই যুবক গ্রেপ্তার
খুন করে আল্লাহর ভয়ে নামাজ পড়ে ক্ষমা চান হত্যাকারীরা

নড়াইল প্রতিনিধি: নড়াইলের সদর উপজেলায় ব্যাটারিচালিত ভ্যানচালক কিশোর আমিনুল বিশ্বাস ওরফে আলিফ (১৫) হত্যার রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত দুই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান নড়াইলের পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম।
গ্রেপ্তার দুই আসামি হলেন সদর উপজেলার চাচড়া গ্রামের মিনারুল বিশ্বাস (২২) ও একই গ্রামের হৃদয় মোল্যা (২০)। নিহত আলিফ ছোট মিতনা গ্রামের কিনায়েত বিশ্বাসের ছেলে।
পুলিশ সুপার জানান, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গত শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাতে আলিফকে কৌশলে বাড়ি থেকে ডেকে নেয় মিনারুল ও হৃদয়। উদ্দেশ্য ছিল আলিফের ব্যাটারিচালিত ভ্যান ছিনিয়ে নেওয়া। তারা ওই রাতে আঞ্চলিক সড়কে ঘুরতে ঘুরতে কোমল পানীয়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে আলিফকে পান করায়। কিছুক্ষণ পর আলিফ অচেতন হলে তারা ভ্যানটি বাহিরগ্রাম বাজারে নিয়ে গিয়ে হৃদয়ের মামার বাড়িতে রেখে আসে।
পরে তিনজন পায়ে হেঁটে দেবভোগ এলাকার নুড়িতলা বিলে পৌঁছায়। সেখানে আলিফ ঘুমিয়ে পড়লে হৃদয় তার পা চেপে ধরে রাখে এবং মিনারুল গলাটিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপর আলিফের মোবাইল ও নগদ টাকা নিয়ে মরদেহ পাশের পুকুরে কচুরিপানার নিচে ফেলে রাখে তারা।
রবিউল ইসলাম বলেন, হত্যার পর দুজন হৃদয়ের মামার বাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ফজরের আজানের সময় অনুশোচনায় তারা স্থানীয় মসজিদে নামাজ আদায় করে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং সকালে বাজারে গিয়ে চা-পান করে। পরে মিনারুল নিজ এলাকায় ফিরে আসে, আর হৃদয় পালিয়ে গোপালগঞ্জে যায়।
আলিফ নিখোঁজের ঘটনায় তার মা রোববার (৫ অক্টোবর) সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরদিন সন্দেহভাজন হিসেবে মিনারুলকে আটক করলে সে হত্যার কথা স্বীকার করে এবং মরদেহের অবস্থান জানায়। তার তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ দেবভোগের নুড়িতলা বিলের কচুরিপানার নিচ থেকে আলিফের মরদেহ উদ্ধার করে। শহরের মুচির পোল এলাকা থেকে উদ্ধার হয় বিক্রিত ভ্যানের ব্যাটারি, এবং হৃদয়ের মামার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ভ্যানটি।
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে সোমবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে হৃদয়কে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় আলিফের অ্যান্ড্রয়েড ফোন। মঙ্গলবার দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মারুফ হাসানের আদালতে দুই আসামি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। তারা আদালতে জানান, সামান্য কিছু টাকার জন্যই তারা আলিফকে হত্যা করে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) নূর-ই আলম সিদ্দিকী, সদর থানার ওসি মো. সাজেদুল ইসলামসহ জেলা পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।