ধর্ষণ–পরবর্তী পূর্ণ মানবিক সেবা দিলেন ডা. আফসানা হোসেন শাওন
মানবিক চিকিৎসক ডা. আফসানা হোসেন শাওন
কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলায় ধর্ষণ–পরবর্তী মানবিক চিকিৎসা সহায়তার এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন গাইনী কনসালটেন্ট ডা. আফসানা হোসেন শাওন, যিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কর্মরত এবং তাড়াইল স্পেশালাইজড হসপিটালে নিয়মিত বসেন। ধলা ইউনিয়নের ১২ বছর বয়সী কিশোরী চয়নিকা (ছদ্মনাম) ধর্ষণের প্রায় পাঁচ মাস পর শারীরিক জটিলতা দেখা দিলে তাড়াইল স্পেশালাইজড হসপিটালে চিকিৎসা নিতে আসে। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জানা যায়, সে ২৫ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা। বিষয়টি জানাজানি হলে দরিদ্র পরিবারটি চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়ে। এ অবস্থায় মানবিক বিবেচনায় ডা. শাওন ঘোষণা দেন—চয়নিকার গর্ভকাল, প্রসব ও প্রসব–পরবর্তী সব চিকিৎসা তিনি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেবেন।
ঘোষণার পর থেকে কিশোরীটির নিয়মিত চেকআপ, প্রয়োজনীয় ওষুধ, ল্যাব পরীক্ষা এবং চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। চিকিৎসকসহ হাসপাতালের সার্বিক তত্ত্বাবধানে চয়নিকার শারীরিক অবস্থার ধীরে ধীরে উন্নতি হতে থাকে। কয়েকদিন আগে গভীর রাতে প্রসব বেদনা শুরু হলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের সার্বিক সহযোগিতায় স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে সে একটি সুস্থ কন্যাশিশুর জন্ম দেয়।
প্রসব–পরবর্তী চিকিৎসা ব্যয় নিয়েও পরিবার যখন নতুন দুশ্চিন্তায় পড়ে, তখন বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। পরে ডা. শাওনের পরামর্শে হাসপাতালের চেয়ারম্যান মনসুরুল হক সুমন মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পুরো চিকিৎসা ব্যয় মওকুফের সিদ্ধান্ত নেন। এতে পরিবার আরও স্বস্তি ফিরে পায়। এ বিষয়ে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হক বাবন বলেন, “এটি শুধু একটি চিকিৎসা দায়িত্ব নয়, আমাদের নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব।” তিনি আরও জানান, কোনো আইনি জটিলতা না থাকলে কিশোরীর ভবিষ্যৎ নিয়েও উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ধর্ষণ–পরবর্তী সময়ে একটি ১২ বছরের কিশোরীর পাশে দাঁড়িয়ে তার জীবন, স্বাস্থ্য ও মর্যাদা রক্ষায় ডা. আফসানা হোসেন শাওন এবং তাড়াইল স্পেশালাইজড হসপিটালের এই ভূমিকা স্থানীয়ভাবে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ মনে করছেন—এ ধরনের উদ্যোগ অসহায় মানুষের জীবন বাঁচায় এবং সমাজে সহমর্মিতা, দায়িত্ববোধ ও মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। কিশোরীর বাবা ও বড় ভাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং ডা. শাওনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “আল্লাহ ডা. শাওনকে নেক হায়াত দিন এবং হাসপাতালের সেবাদান কবুল করুন। তাঁদের সহযোগিতা ছাড়া মেয়ের চিকিৎসা সম্ভব ছিল না।”












