অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে ১৪ কোটি টাকায় নির্মিত কিশোরগঞ্জ পৌর মার্কেট
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি: অযত্ন আর অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কিশোরগঞ্জ পৌর মার্কেট। ২০১৯ সালে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে মার্কেটের নির্মাণকাজ হাতে নেয় কিশোরগঞ্জ পৌরসভা। ২০২২ সালে ভবন নির্মাণ শেষ হলেও এখন পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের মধ্যে দোকান বণ্টন ও ভবন হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি।
দীর্ঘসূত্রিতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। নতুন ভবন বুঝিয়ে দেওয়ার আগেই ভেঙে গেছে জানালার কাচ, খসে পড়ছে রঙের পলেস্তারা, এমনকি ভবনের দেয়ালে দেখা দিয়েছে ফাটল। অযত্নে পড়ে নষ্ট হচ্ছে আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম।
ব্যবসায়ীদের দোকান বুঝিয়ে না দিয়ে ভবনটি বর্তমানে গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এতে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি এডিবিকে চক্রবৃদ্ধি হারে প্রায় ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে হচ্ছে পৌরসভাকে।
স্বাধীনতার পর থেকে জেলার অন্যতম পাইকারি বাজার হিসেবে পরিচিত এ মার্কেটে রয়েছে কসমেটিক্স, খেলনা, সুতা ও কাপড়ের ১৫৬টি দোকান। সপ্তাহে রোববার ও বৃহস্পতিবার এখানে বসে ছাগলের হাট। ফলে ওই দিনগুলোতে ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। নতুন ভবন ব্যবহার উপযোগী না হওয়ায় অনেককেই এখনো অস্থায়ী ছাপড়ি ঘরে ব্যবসা চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
ব্যবসায়ী নাজমুল আলম রৌশন বলেন, “মার্কেট নির্মাণের সময় অস্থায়ী দোকান করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিনেও ভবন বুঝিয়ে না দেওয়ায় ব্যবসায়িক ক্ষতির পাশাপাশি কাস্টমারদের ভোগান্তিও বাড়ছে।”
আরেক ব্যবসায়ী হাদিউল ইসলাম হাবিব বলেন, “আমাদের জন্য তৈরি এই বিল্ডিংয়ের নিচে এখন সপ্তাহে দুদিন ছাগলের হাট বসে। ফলে টাইলস নষ্ট হচ্ছে, রঙ খসে পড়ছে, দরজা-জানালা ভাঙছে। এমনকি দেয়ালেও ফাটল দেখা দিয়েছে।”
তিনি আরও জানান, “আগের দোকান ভেঙে ছাপড়ি ঘরে ব্যবসা করতে হচ্ছে। জায়গা কম থাকায় মালামাল বাইরে রাখতে হয়। বৃষ্টি হলে পণ্য নষ্ট হয়, দুর্ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষে কাজ করা সম্ভব হবে না।”
কিশোরগঞ্জ পৌর মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি লুৎফুল বারী খোকন বলেন, “ভবন নির্মাণের পর থেকে পৌর কর্তৃপক্ষ নানা অজুহাতে হস্তান্তর বিলম্ব করছে। একের পর এক প্রশাসক বদলি হওয়ায় সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা আর্থিক ও শারীরিকভাবে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দ্রুত দোকান বুঝিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানাই।”
কিশোরগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক জেবুন নাহার শাম্মী বলেন, “ক্ষতিগ্রস্তদের সঠিক তালিকা না থাকায় দোকান হস্তান্তর বিলম্ব হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্তদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা ছিল। ফলে পৌরসভা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দ্রুত তদন্তপূর্বক দোকান বুঝিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
তথ্য অনুযায়ী, পৌরসভার অধীনে প্রায় ২ একর ২০ শতাংশ জায়গাজুড়ে ছোট-বড় দোকান থেকে প্রতি মাসে গড়ে পৌরসভা প্রায় সাড়ে সাত লাখ টাকা রাজস্ব আয় করে থাকে।







