খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল-এর কলম
নির্বাচনের প্রস্তুতি, মিত্রদের দাবি এবং বিএনপির নেতৃত্বের ত্যাগ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপিতে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে পূর্ণাঙ্গভাবে। দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এখন বিএনপির কৌশল এবং মিত্র দলের সঙ্গে সমন্বয়ের প্রক্রিয়া অনেকটাই নজর কেড়েছে। জানা যাচ্ছে, দলটি শুধু নিজেদের প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড় করাচ্ছে না, বরং মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় রেখে নির্বাচনী মাঠে শক্তিশালী অবস্থান নিতে চাইছে। মিত্রদের মধ্যে শতাধিক আসনের দাবি উঠেছে, যা প্রমাণ করছে দলটি কেবল ক্ষমতার লড়াই নয়, বরং অংশীদারিত্ব এবং রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার বিষয়েও অত্যন্ত সচেতন।
বিএনপির এই অবস্থান কেবল আজকের নয়, এটি দলের দীর্ঘ ইতিহাস ও আদর্শের ফলাফল। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নেতৃত্বে গঠিত বিএনপি দেশের গণতান্ত্রিক নীতি ও স্থিতিশীলতার জন্য এক শক্ত ভিত্তি স্থাপন করে। জিয়াউর রহমান ছিলেন সাহসী ও দূরদর্শী নেতা, যিনি কঠিন সময়েও দেশের মানুষকে স্থিতিশীলতা ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করেছিলেন। তার নেতৃত্বে গঠিত দল আজও তার আদর্শ ও দর্শনের উপর দাঁড়িয়ে আছে। তার সাহসিকতা, দূরদর্শিতা এবং দেশের জন্য অননুপ্রাণিত ত্যাগ রাজনৈতিক নেতৃত্বের এক নিদর্শন।
পরবর্তীতে, দলের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন বেগম খালেদা জিয়া। কঠিন সময়ের রাজনৈতিক চাপ, দমন-পীড়ন ও কারাবাস—এসব সত্ত্বেও তিনি দলের নেতৃত্ব ধরে রাখেন এবং দেশের গণতন্ত্র রক্ষার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেন। তাঁর দৃঢ় মনোবল, সাহস এবং ত্যাগ বিএনপির মূল শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। বেগম জিয়ার নেতৃত্বে দল দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও নির্বাচনী সমীকরণে সঠিক সমন্বয় এবং কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়েছে।
বর্তমান প্রজন্মের নেতৃত্বে তারেক জিয়া দলের আধুনিকীকরণ, মিত্রদের সঙ্গে সমন্বয় এবং নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব তৈরি করার কাজ করছেন। তারেক জিয়ার উদ্যোগ বিএনপির রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং নির্বাচনী প্রস্তুতিকে আরও কার্যকর করেছে। তিনি মিত্র দল ও জোটের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে দলের লক্ষ্য, আদর্শ এবং নির্বাচনী কৌশলকে মেলাতে সচেষ্ট।
সংবাদ অনুযায়ী, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, গণফোরাম, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট এবং জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট শতাধিক আসনের দাবি তুলেছে। এই প্রক্রিয়ায় বিএনপি প্রথমে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা যাচাই-বাছাই করছে এবং মাঠে তাদের প্রচারণার জন্য সবুজ সংকেত দিচ্ছে। এটি কেবল ভোট সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা নয়, বরং দলের আদর্শ, নৈতিকতা এবং রাজনৈতিক দায়িত্ববোধের এক প্রকাশ।
মিত্র দলের সঙ্গে সমন্বয় এবং শতাধিক আসনের বরাদ্দ প্রদর্শন করছে বিএনপির রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং নেতৃত্বের প্রগাঢ়তার প্রতিফলন। এটি নির্দেশ করছে যে, দল শুধু নির্বাচনে জেতার জন্য নয়, দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও স্থিতিশীলতা রক্ষার দায়িত্বও নিয়েছে। মিত্র দলের সঙ্গে অংশীদারিত্ব বজায় রাখার মাধ্যমে বিএনপি রাজনৈতিক ভারসাম্য এবং দেশপ্রেমের প্রতিফলন ঘটাচ্ছে।
বিএনপির ইতিহাসে দেখা যায় যে, দলটি কখনোই স্বার্থপর রাজনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়নি। দেশের জন্য ত্যাগ, নেতাদের সাহসিকতা এবং আদর্শের জন্য তাদের স্থির প্রতিশ্রুতি দলের মূল ভিত্তি। জিয়াউর রহমানের দূরদর্শিতা, বেগম খালেদা জিয়ার দৃঢ়তা এবং তারেক জিয়ার নেতৃত্ব একত্রে দেশের রাজনীতিতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তাদের ত্যাগ এবং দৃষ্টিভঙ্গি নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করছে এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের নৈতিক মান বজায় রাখতে সহায়তা করছে।
নির্বাচনী মাঠে বিএনপির কৌশল ও মিত্র দলের সঙ্গে সমন্বয় একটি ইতিবাচক উদাহরণ। এখানে দেখা যাচ্ছে, দলের নীতি, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং নেতৃত্বের দায়বদ্ধতা মাঠে প্রতিফলিত হচ্ছে। দেশের স্থিতিশীলতা, জনগণের আস্থা এবং রাজনৈতিক অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে এই সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেবল আসন ভাগাভাগি নয়, বরং দেশের গণতন্ত্র, নেতাদের ত্যাগ, দলের আদর্শ এবং জনগণের বিশ্বাসের পরীক্ষা। বিএনপির লক্ষ্য হলো দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান রক্ষা করা, অংশীদারিত্ব বজায় রাখা এবং নির্বাচনী মাঠে ন্যায়ের ভিত্তিতে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা। এই প্রক্রিয়ায় দেশের রাজনীতি শুধু ক্ষমতার লড়াই নয়, বরং আদর্শ, সাহসিকতা ও ত্যাগের গল্প হয়ে দাঁড়ায়।
শেষ পর্যন্ত, বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলোর সমন্বয়, নেতৃত্বের দৃঢ়তা এবং নেতাদের ত্যাগ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হবে। দেশের স্থিতিশীলতা, জনগণের আস্থা এবং রাজনৈতিক আদর্শ রক্ষায় বিএনপি যে ভূমিকা পালন করছে, তা নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা এবং সকলের জন্য শিক্ষা। এই প্রক্রিয়া স্পষ্ট করছে—নেতৃত্বের মান, আদর্শ এবং ত্যাগ ছাড়া দেশের গণতন্ত্রের ভিত্তি দৃঢ় রাখা সম্ভব নয়।