আপনার শরীর ভিটামিন ডি পাচ্ছে তো?

ভিটামিন ডি মানবদেহের জন্য অপরিহার্য একটি পুষ্টি উপাদান, যা হাড়, দাঁত, পেশি ও রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সুস্থ রাখে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে এই ভিটামিনের ঘাটতি দ্রুত বাড়ছে। চিকিৎসকদের মতে, পর্যাপ্ত সূর্যালোক না পাওয়া এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এর অন্যতম প্রধান কারণ।
স্বাভাবিক অবস্থায় ভিটামিন ডি উৎপন্ন হয় যখন সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি (UVB) ত্বকে পড়ে। কিন্তু আধুনিক জীবনযাত্রায় মানুষ দীর্ঘ সময় ঘরের ভেতরে থাকেন—অফিস, বাসা বা যানবাহনের মধ্যে। ফলে সূর্যালোকের সংস্পর্শ কমে যাচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন সকালে ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রোদে থাকলে শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি উৎপন্ন হয়।
এন্ডোক্রাইন সোসাইটির এক আন্তর্জাতিক গবেষণায় বলা হয়েছে, ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি শুধু হাড় ক্ষয়ের কারণ নয়, এটি বিষণ্নতা, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, ডায়াবেটিস, ক্লান্তি, এমনকি হৃদরোগের সঙ্গেও সম্পর্কিত।
বাংলাদেশে পরিচালিত বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, শহরের প্রায় ৭০ শতাংশ নারী ও ৫০ শতাংশ পুরুষের শরীরে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা স্বাভাবিক সীমার নিচে। দীর্ঘ সময় এয়ারকন্ডিশন রুমে থাকা, পর্দাযুক্ত পোশাক, এবং রোদে না যাওয়া এ সমস্যার মূল কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
খাদ্য থেকেও সীমিত পরিমাণে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। যেমন—চর্বিযুক্ত মাছ (স্যালমন, টুনা, সার্ডিন), ডিমের কুসুম, দুধ, মাখন, চিজ ও কিছু ফোর্টিফাইড খাদ্যদ্রব্য। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু খাবারের মাধ্যমে শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি পাওয়া সম্ভব নয়, নিয়মিত রোদে থাকা অপরিহার্য।
চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, যাদের শরীরে হাড় বা পেশিতে ব্যথা, মনমরা ভাব, ক্লান্তি বা চুল পড়ার সমস্যা দেখা দিচ্ছে, তারা রক্ত পরীক্ষা করে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা জেনে নেওয়া উচিত। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে।
ভিটামিন ডি শুধু শারীরিক নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গেও নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। তাই প্রাকৃতিকভাবে এই ভিটামিনের উৎস—সূর্যের আলো—থেকে প্রতিদিন অল্প সময় হলেও উপকার নেওয়া উচিত।
ভিটামিন ডি ঘাটতির সাধারণ লক্ষণ:
হাড় বা পেশিতে ব্যথা,
দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি,
মনমরা ভাব বা বিষণ্নতা,
চুল পড়া,
ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়া।
এম.এম./কি