বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২
বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২

খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল-এর কলম

গণতন্ত্রের পথেই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ

অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: শনিবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৫, ৯:৩০ অপরাহ্ণ ই-পেপার প্রিন্ট ভিউ
গণতন্ত্রের পথেই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শেষে দেশে ফিরে একেবারে মূল বার্তাটি দিয়েছেন—“বাংলাদেশকে এখন গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।” এটি নিছক কোনো দলের রাজনৈতিক স্লোগান নয়, বরং একটি জাতির বাঁচা-মরার প্রশ্ন। গণতন্ত্র ছাড়া বাংলাদেশকে কল্পনা করা যায় না। অথচ স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়েও এই গণতন্ত্রকে আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি। বারবার একনায়কতন্ত্র, সামরিক শাসন, একদলীয় শাসন ও ভুয়া নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা পথ হারিয়েছি।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যে রাষ্ট্র পেলাম, তার মূল দর্শন ছিল স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সাম্য ও মানবাধিকার। কিন্তু স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দেশে একদলীয় বাকশাল কায়েম করে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়, ভিন্নমত দমন করা হয়, সংসদীয় রাজনীতি স্তব্ধ হয়ে যায়। এভাবে প্রথমবার গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়।

১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন জিয়াউর রহমান। তখন দেশের রাজনীতি ও প্রশাসন ছিল প্রায় অচল অবস্থায়। সেই সময়ে জিয়াউর রহমানের নেওয়া ঐতিহাসিক পদক্ষেপগুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় রচনা করে। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন, বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করেন, গণমাধ্যমকে কিছুটা স্বাধীনতা দেন, আর জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনেন।

১৯৭৮ সালের গণভোট ও ১৯৭৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন জনগণকে দীর্ঘদিন পর অংশগ্রহণমূলক রাজনীতির স্বাদ দেয়। জিয়াউর রহমানের সাংবিধানিক সংস্কার বিশেষ করে রাজনৈতিক বহুমতের স্বীকৃতি ও ধর্মীয় স্বাধীনতার সংরক্ষণ আজও বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভিত্তি হয়ে আছে। তাঁর সময়কার ‘বহুদলীয় গণতন্ত্র’ আজ বিএনপির নয়, সমগ্র জাতির সম্পদ।

কিন্তু এই গণতন্ত্র টেকেনি। ১৯৮২ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। শুরু হয় দীর্ঘ নয় বছরের সামরিক শাসন। এরশাদের সময়ে গণতন্ত্রকে দমন করা হয়, রাজনৈতিক কর্মীরা কারাগারে যান, সংবাদপত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত হয়। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, জনগণ কখনোই একনায়কতন্ত্র মেনে নেয়নি। ছাত্র-জনতা, পেশাজীবী সমাজ ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একত্রিত হয়ে আন্দোলন শুরু করে।

১৯৯০ সালের গণআন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনের রক্ত, অসংখ্য আন্দোলনকারীর আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে এরশাদের পতন ঘটে। এই গণআন্দোলন প্রমাণ করে—গণতন্ত্রকে সাময়িকভাবে স্তব্ধ করা যায়, কিন্তু চিরতরে হত্যা করা যায় না।

তবে দুঃখিনীর কপালে সুখ বেশি দিন থাকে না, ২০০৬ সালে আবার রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারি হয়। দেশের ক্ষমতা চলে যায় অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে, যেটি সামরিক প্রভাবিত ছিল। দুই বছরের এই শাসনামলে রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেপ্তার, মৌলিক অধিকার হরণ, গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ—সবই হয়েছিল। যদিও উদ্দেশ্য ছিল “রাজনীতি শুদ্ধ করা”, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা ব্যর্থ হয়। জনগণের ভোটের অধিকার ছাড়া কোনো সরকারই টিকে না—এই শিক্ষা আবারও স্পষ্ট হয়।

সেই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রথম কয়েক বছরে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ দেখা গেলেও ধীরে ধীরে দেশ আবারও একদলীয় শাসনের দিকে ধাবিত হয়। ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয় যেটি ছিল জনগণের আন্দোলনের ফসল এবং সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য একমাত্র ব্যবস্থা। ফলে ২০১৪ সালের নির্বাচন হয় বিরোধী দলবিহীন, যেখানে অধিকাংশ আসনে ভোটাররা ভোটই দিতে পারেননি।

২০১৮ সালের নির্বাচন আরও কলঙ্কিত। ভোটাররা ব্যালটের কাছে যাওয়ার আগেই রাতে বাক্স ভরে ফেলা হয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও পর্যবেক্ষকরা এটিকে ‘মধ্যরাতের নির্বাচন’ বলেছে। এখন বাংলাদেশে সংসদ কার্যত একদলীয়, বিরোধী কণ্ঠস্বর দমন করা হয়, মামলা-হামলা-গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পরিসর সংকুচিত হয়ে গেছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হুমকির মুখে, মানবাধিকার লঙ্ঘন নিত্যদিনের ঘটনা।

লক্ষ্য করলে দেখবেন যে, আজ শুধু বাংলাদেশের মানুষ নয়, আন্তর্জাতিক মহলও উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ সবাই এক কণ্ঠে বলছে, বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে হবে। ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য সেই আন্তর্জাতিক প্রত্যাশার প্রতিফলন।

বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে শিক্ষা একটাই—গণতন্ত্র ছাড়া এই দেশ চলতে পারে না। জিয়াউর রহমান যে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেটি আজও আমাদের মুক্তির পথ। এরশাদের পতন কিংবা ১/১১ সরকারের ব্যর্থতা প্রমাণ করেছে, জনগণ ছাড়া কোনো শাসন টেকসই নয়।

আজ সময় এসেছে—একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার। এটাই বাংলাদেশের ইতিহাস, এটাই আমাদের ভবিষ্যৎ।

সব শেষ কথা এটাই গণতন্ত্রের প্রশ্নে আমরা বারবার হোঁচট খেয়েছি, কিন্তু আবারও উঠে দাঁড়িয়েছি। এখন আর বিলম্ব করার সুযোগ নেই। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতেই হবে। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

কারণ, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—যারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, তারা টেকেনি; কিন্তু গণতন্ত্র চিরকাল বেঁচে থেকেছে জনগণের হৃদয়ে।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কেবল একটি পথেই নিহিত—গণতন্ত্রের পথে।

কিশোরগঞ্জে শিশুদের ঝগড়াকে কেন্দ্র করে “কবজিকাটা” বাক্কার বাহিনীর হামলা ও লুটপাট

হারিছ আহমেদ প্রকাশিত: বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫, ৫:৫৭ অপরাহ্ণ
কিশোরগঞ্জে শিশুদের ঝগড়াকে কেন্দ্র করে “কবজিকাটা” বাক্কার বাহিনীর হামলা ও লুটপাট

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার রশিদাবাদ ইউনিয়নের শ্রীমন্তপুর গ্রামে শিশুদের খেলা নিয়ে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘবদ্ধ হামলা, লুটপাট ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে একজন নারী।

ঘটনাটি ঘটে গত সোমবার (১৩ অক্টোবর) রাত আটটার দিকে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, “কবজিকাটা বাক্কার” নামে পরিচিত আবু বাক্কার ও তাঁর সহযোগীরা ধারালো দা, রড ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। হামলার সময় তারা ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও মোবাইল ফোন লুটপাট করে নিয়ে যায়।

আহতরা হলেন—নজরুল ইসলাম, তাঁর ভাই আরজু মিয়া ও ভাবি বিথী আক্তার। বর্তমানে তাঁরা কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

আহত নজরুল ইসলাম কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় ১১ জনকে আসামি করে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। অভিযুক্তরা হলেন—শ্রীমন্তপুর গ্রামের আবু বাক্কার (৬৫), রাব্বুল মিয়া (২৬), আবু বাক্কার (৩৭), জসু মিয়া (৫৫), রিফাত (২৪), জহুরুল মিয়া (২৫), বাবুল মিয়া (৫২), সোহলে মিয়া (২৩), চাঁদ মিয়া (১৯), জাহিমা আক্তার (৩৪) ও রেদোয়ান।

অভিযোগে বলা হয়, নজরুল ইসলামের ছয় বছর বয়সী ভাতিজা জারিফ প্রতিবেশী মদিনা আক্তারের ছেলের সঙ্গে খেলতে গিয়ে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ে। এই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাতে একদল লোক পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায়।

হামলার সময় রাব্বুল মিয়া নজরুল ইসলামের মাথায় দা দিয়ে কোপ দেন এবং আবু বাক্কার লোহার রড দিয়ে চোখে আঘাত করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। বাধা দিতে গেলে আরজু মিয়া ও তাঁর স্ত্রী বিথী আক্তারকেও পিটিয়ে আহত করা হয়।

বিথী আক্তার জানান, হামলাকারীরা তাঁর গলায় থাকা এক ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয় এবং শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। পাশাপাশি ঘরে ভাঙচুর চালিয়ে প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষতি করে এবং নগদ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন নিয়ে যায়।

স্থানীয়রা বলেন, “হামলাকারীরা এলাকার চিহ্নিত দাঙ্গাবাজ ও প্রভাবশালী একটি গ্রুপ। তারা আগেও একটি পরিবারকে মারধর ও ঘর পুড়িয়ে গ্রামছাড়া করেছিল। এবারও একই পদ্ধতিতে ভয়ভীতি দেখিয়ে পুরো এলাকা আতঙ্কে রেখেছে।”

তবে অভিযুক্তদের একজন আবু বাক্কার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,

“ওদের সঙ্গে আমাদের জমিজমা নিয়ে পুরনো বিরোধ আছে। তারা নিজেরাই নাটক সাজিয়ে আমাদের ফাঁসাতে চাইছে।”

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন,

“আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।”

স্থানীয়রা প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন, যাতে “কবজিকাটা বাক্কার বাহিনীর” মতো দাঙ্গাবাজ চক্রের দৌরাত্ম্য বন্ধ হয় এবং গ্রামে আবারও শান্তি ফিরে আসে।

পাকিস্তানি বাহিনীর ট্যাঙ্ক জব্দ করে চালিয়ে নিয়ে গেল তালেবান!

অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫, ৩:২৭ অপরাহ্ণ
পাকিস্তানি বাহিনীর ট্যাঙ্ক জব্দ করে চালিয়ে নিয়ে গেল তালেবান!

আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। সর্বশেষ সংঘর্ষে পাকিস্তানি সেনাদের একটি ট্যাঙ্ক জব্দ করার দাবি করেছে তালেবান। বুধবার (১৫ অক্টোবর) আফগানিস্তানের কান্দাহারের স্পিন বোলদাক এলাকায় সংঘর্ষের পর এক ভিডিও প্রকাশ করে তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ এই দাবি জানান।

সামাজিক মাধ্যম এক্সে (পূর্বে টুইটার) প্রকাশিত ওই ভিডিওতে দেখা যায়, আফগানিস্তানের সড়কে তালেবান সদস্যরা একটি ট্যাঙ্ক চালাচ্ছে। মুজাহিদ দাবি করেন, পাকিস্তানি বাহিনী নতুন করে আফগান সীমান্তে হামলা চালায়, যাতে ১২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ১০০ জনেরও বেশি আহত হন।

তিনি আরও জানান, পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় তালেবানরা বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করে এবং তাদের পোস্ট, ট্যাঙ্ক ও অস্ত্র জব্দ করে।

তবে ভিডিওটির সত্যতা এখনো স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানায়, তালেবানরা আসলেই ট্যাঙ্কটি জব্দ করেছে কি না বা ভিডিওতে প্রদর্শিত ট্যাঙ্কটি পাকিস্তানি বাহিনীর কিনা—তা নিশ্চিত নয়।

ভারতের সংবাদমাধ্যম সিএনএন-নিউজ১৮ জানায়, বুধবারের এই সংঘর্ষ আফগানিস্তানের উত্তর ও দক্ষিণ উভয় সীমান্ত ফ্রন্টে সংঘটিত হয়। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের ওরাকজাই জেলার ঘিলজো এলাকায় তালেবান যোদ্ধারা পাকিস্তানি মাহমুদজাই পোস্টে হামলা চালায়। ওই সংঘর্ষে অন্তত ছয় পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা সূত্র।

অন্যদিকে পাকিস্তানি বাহিনীর দাবি, পাল্টা অভিযানে তারা ১৫ থেকে ২০ জন তালেবান যোদ্ধাকে হত্যা করেছে।

এই ঘটনার পর আফগান-পাকিস্তান সীমান্তে পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। দুই দেশের মধ্যে চলমান সীমান্ত সংঘর্ষ আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে নতুন করে জটিল করে তুলছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

পাকিস্তানের হামলায় আফগানিস্তানে নিহত ১২

অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:২৫ অপরাহ্ণ
পাকিস্তানের হামলায় আফগানিস্তানে নিহত ১২

পাকিস্তানের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য খাইবার পাখতুনখোয়ার কুররম জেলার সীমান্তে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে ফের সংঘাতের ঘটনা ঘটে। এতে পাকিস্তানি বাহিনীর হামলায় ১২ জনেরও বেশি আফগান বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও ১০০ জন।

বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকালে আফগান তালেবান মুখপাত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। খবর রয়টার্সের।

মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে ইতোমধ্যে আফগান সেনাবাহিনীর ৪টি সীমান্ত পোস্ট এবং ৬টি ট্যাংক ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী।

জিও নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার বিকালের দিকে কুররম সীমান্তে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে বিনা উসকানিতে যৌথভাবে হামলা চালায় আফগানিস্তানের সেনাবাহনী এবং পাকিস্তানের নিষিদ্ধ রাজনৈতিক গোষ্ঠী তেহরিক-ই তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)।

হামলার জবাবে পালটা হামলা চালায় পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। এ সময় আফগানিস্তান সেনাবাহিনীর একটি সীমান্ত পোস্ট এবং একটি ট্যাংক ধ্বংস করা হয়, সঙ্গে নিহত হন টিটিপির এক জ্যেষ্ঠ কমান্ডার।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সূত্র জানিয়েছে, সংঘাত শুরুর মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে কুররম সীমান্তের ওপারে আফগানিস্তানের খোস্ট প্রদেশের শামশাদ সেনাপোস্ট ধ্বংস করেন পাকিস্তানের সেনারা। এ সময় সেই পোস্টে থাকা আফগান সেনা ও টিটিপি যোদ্ধাদের মধ্যে কয়েক জন নিহত ও আহত হন, বাকিরা পালিয়ে যান।

শামশাদ পোস্ট ধ্বংস করার পর একই প্রদেশের অপর সেনা পোস্ট নার্গসার ধ্বংস করে পাকিস্তান। এই পোস্টটিতে ট্যাংক মোতায়েন করেছিল আফগান সেনারা। পাক সেনা সূত্রে জানা গেছে, নার্গসার পোস্টে অন্তত ৪টি ট্যাংক ধ্বংস করা হয়েছে।

এরপর সীমান্তের ওপারে আফগান সেনাবাহিনীর তুর্কমানজাই, পোলসেন সেনাপোস্ট ধ্বংস করে পাকিস্তানি সেনারা। তুর্কমানজাই পোস্টে ষষ্ঠ ট্যাংকটি ধ্বংস করা হয়। এছাড়া পোলসেন পোস্টের কাছে একটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির ছিল। সেটিও ধ্বংস করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সূত্র।

সংঘাতে আফগানিস্তানের এই চার পোস্টে বেশ কয়েক জন আফগান সেনা ও টিটিপি যোদ্ধা নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা জিও নিউজকে জানিয়েছেন, পাকিস্তানের হামলার সময় টিকতে না পেরে সেনা পোস্ট থেকে পালিয়ে গেছেন জীবিত আফগান সেনারা। একটি পোস্টে সেনারা পালানোর আগে আত্মসমর্পণজ্ঞাপক সাদা পতাকাও তুলেছিলেন।

এর আগে চলতি মাসের ১১ তারিখে আফগানিস্তানের পাকিস্তানের আঙ্গুর আড্ডা, বাজাউর, কুররম, দির, চিত্রাল, বারামচাসহ আরও কয়েকটি এলাকায় হামলা চালায় আফগান সেনাবাহিনী। তবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীও প্রস্তুত হয়ে ছিল। আফগানিস্তানের হামলার পরপরই পালটা জবাব দেওয়া শুরু করে পাকিস্তান। সেই সংঘাতে ২ শতাধিক আফগান সেনা এবং পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর ২৩ জন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে পাক সেনাবাহিনীর আন্তঃবাহিনী সংযোগ দপ্তর (আইএসপিআর)।

পাকিস্তানের নিষিদ্ধ রাজনৈতিক গোষ্ঠী তেহরিক-ই তালিবান পাকিস্তানের নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও সহায়তা প্রদানের অভিযোগে গত ৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে বিমান হামলা চালায় পাকিস্তান। পাকিস্তান তেহরিক-ই-তালিবানের (টিটিপি) প্রধান নূর ওয়ালি মেসুদ নিহত হয়েছেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। সঙ্গে ক্বারী সাইফুল্লাহ মেসুদসহ তার কয়েকজন সহযোগীও প্রাণ হারিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাইফুল্লাহ মেসুদকে টিটিপির পরবর্তী প্রধান হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল।

১১ অক্টোবরের হামলার কারণ হিসেবে আফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন তালেবান সরকার বলেছিল, ৯ অক্টোবর বিমান হামলার মাধ্যমে আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তান। সেই হামলার জবাব দিতে ১১ অক্টোবর হামলা চালিয়েছিল পাক সেনাবাহিনী।